জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: সরকারী কর্মচারীর ছদ্মবেশে দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অভিযান পরিচালনা, জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ নামে একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সেগুনবাগিচা দুদক কার্যালয় থেকেই তাদের আটক করে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর পল্টন থানা পুলিশ দুদক কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, ভুয়া পরিচয়দানকারী দুদক কর্মকর্তাদের আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। পরে তাদের স্বীকরোক্তি রেকর্ড করে অজ্ঞাত আট আসামিসহ চৌদ্দ জনের নামে পল্টন থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এই চক্রের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই ও অভিযান পরিচালনা করতে দুদকে আসে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। দুদকের নিরাপত্তা কর্মীও কর্মকর্তারা তাকে আটক করেন। পরে প্রতারকদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে আরেক জন কে আটক করেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে প্রায় ৫ লাখের বেশি টাকা চাঁদাবাজি করার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- কথিত দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সম্রাট, সংস্থা’র পরিচালক (অপারেশন) মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান, নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম, এছাড়া মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন পটুয়াখালীর সোলাইমান মুফতি, সিয়াম মাহমুদ মোবারক, হবিগঞ্জের রনি আহেমদ পায়েল এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও আটজনকে আসামী করা হয়েছে।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, সরকারী কর্মচারী না হয়েও পরস্পর যোগসাজশে সরকারী কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার আশ্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারী স্থানে আইন বহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন। জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক মিমাংসার নামে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৮৫/৪১৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬/৩৪ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ২৪/২৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত আসামীগণ ভুয়া দুদক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের নির্দেশিত হয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দেখা যায় যে, আসামী মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান এর নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র “দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা” (ঠিকানা: ৮৫ নয়া পল্টন (৪র্থ তলা), নামীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরূপ প্রতিষ্ঠান তৈরী করে দুদকের সহযোগী বাহিনী পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা করে থাকেন। দুদকের অনুরূপ তাদের নিজস্ব লগোসংবলিত ইউনিফর্ম, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড পরিধানপূর্বক বিভিন্ন সরকারী দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারী স্থানে আইন বহির্ভূত অভিযান পরিচালানা করেন। অভিযান পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ/ভুক্তভোগী জনগণের কাছ থেকে চাঁদা দাবী অন্যথায় দুদকে অভিযোগ দেয়া এবং অভিযান পরিচালনাকালে বিনা অনুমতিতে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Syed Rayhan, syed rayhan official, এবং ইউটিউব আইডি। (১) আইনের চোখ/ Syed Rayhan, বিকৃত তথ্য প্রচার করে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ১১ নভেম্বর হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুদকের ছদ্মবেশ ধারণ করে অভিযান পরিচালনা করে কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীদেরকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মো. সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে আইনবহির্ভূতভাবে জন প্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে তা আত্মসাৎ করেন। এখন পর্যন্ত চক্রটি সর্বমোট ১৫৩টি স্থানে অভিযান পরিচালনাসহ সর্বমোট দুই শতাধিক স্থানে প্রকাশ্যে বিচারের নামে চাঁদাবাজি করে।