চলতি বছরের মাধ্যমিকের পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী ফলের এই সর্বোচ্চ সূচক পেয়েছে। কিন্তু এত ভালো ফল করলেও আসন স্বল্পতার কারণে সহজেই ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না তারা। ফলে কলেজ ভর্তি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে এসব শিক্ষার্থী।
তবে পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থীর সবাই কোন না কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ পাবে। সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে যত আসন আছে, পাস করা শিক্ষার্থীদের সবাই ভর্তি হলেও বেশ কিছুসংখ্যক আসন খালি থাকবে।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজটি হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এটি হবে। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, গতবার একাদশ শ্রেণিতে সারা দেশে মোট আসন ছিল ২২ লাখের বেশি। এবার সেই আসনসংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় ২৩ লাখ। এর ফলে যত শিক্ষার্থী পাস করেছে, তাদের সবার ভর্তির সমস্যা হবে না। কিন্তু ‘ভালো কলেজ’ এ ভর্তিতে বেশি চাপ পড়বে।
স্কুল পড়ুয়া ছাড়াও মাদ্রাসার দাখিল ও কারিগরি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশও কলেজে ভর্তি হয়। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণির ভর্তির প্রক্রিয়া, শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি। এরপর যাচাই এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে ফেব্রুয়ারির ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করতে হবে। এরপর ২ মার্চ শুরু হবে একাদশ শ্রেণির ক্লাস।
ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, সেগুলোর মধ্য থেকে মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ‘ভালো বা মোটামুটি ভালো মানের’ কলেজ আছে প্রায় ২০০টি। যেগুলোতে সব মিলিয়ে আসন হতে পারে এক লাখের মতো। এ ধরনের ২০টির মতো কলেজ ঢাকায় অবস্থিত। এগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে কমবেশি ২০ হাজার। তবে এগুলোর কয়েকটিতে বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে ভর্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবে। এর বাইরে ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, সিটি কলেজগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বেশি হবে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং কিছু জেলা শহরে এরকম কিছু কলেজ আছে।
শুধু জিপিএ-৫ নয়, এবার যত শিক্ষার্থী পাস করেছে, তাদের মধ্যে ২৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর ফল জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫ এর নিচে। এসব শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া ৬ লাখের বেশি। যেহেতু শুধু ফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজটি হবে, ফলে এসব শিক্ষার্থীরও চাওয়া থাকবে তুলনামূলক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। ফলে এবার ভর্তির চাপটি বেশি।
বিদ্যমান এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাবেক মহাপরিচালক এস এস ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, গুটিকয়েক কলেজে চাপ বেশি হয়, কারণ সেখানে পড়াশোনা ভালো হয়। তাহলে এই সমস্যার সমাধান করতে হলে বিদ্যমান অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের বিকল্প নেই।