কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি না বানানোর আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার।
জানা যায়, ইসলাম ধর্মে মূর্তি-ভাস্কর্য-প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ—এ কারণে দেশবাসীর প্রতি আবু সাঈদের পরিবার এ আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ‘দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান’ শিরোনামে দেওয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে আবু সাঈদের ভাস্কর্য না বানানোর আহ্বান জানান তার বাবা মকবুল হোসেন ও ভাই আবু হোসেন, রমজান আলী ও বকুল হোসেন।
বিবৃতিতে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন, আমার ছেলে আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, কিছু লোক শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। শহীদ আবু সাঈদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আপনারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আপনাদের ভালোবাসাকে সম্মান করি। কিন্তু আমার ছেলেটাকে কত কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে আপনারা দেখেছেন। আমি চাই না আমার ছেলে দুনিয়াতে যেমন কষ্ট পেয়েছে, আখিরাতেও তেমন কষ্ট পাক।
তিনি আরও বলেন, আমরা মুসলমান। আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করি। যেহেতু ইসলাম ধর্মে সব মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ, সেহেতু আপনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি—দেশের কোনো স্থানে আমার ছেলের মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি যেন না বানানো হয়। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আমার ছেলের জন্য যদি কিছু করতেই চান, তাহলে জনকল্যাণমুখী এমন কিছু কাজ করুন যার সওয়াব আবু সাঈদ কবরে পাবে।
শহীদ আবু সাঈদের জন্য দোয়া চেয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আপনাদের কাছে শহীদ আবু সাঈদের জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আমাদের জন্যও দোয়া চাই।
বিবৃতিতে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, ভাই আবু হোসেন, রমজান ও বকুলের স্বাক্ষর রয়েছে।
বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ভাস্কর্য বা মূর্তি না বানিয়ে কোনো কিছুতে নামকরণ করা হলে আমাদের আপত্তি নেই।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ।