বেরোবি প্রতিনিধি: নিজে সাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে অনেক আগেই মাথায় আসে। বিশেষ করে করোনা কালে যখন ঘরে বসে বিরক্তিকর সময় পার করছিলাম। ঠিক সেই সময়ই মাথায় আসলো অনলাইন ই-শপিং য়ের বিষয়টা। কিন্তু শুরু করার পর অল্প সময়ে সবার কাছ থেকে এত ভালো সাড়া পাব ভাবিনি। প্রথম দিনের সেল পোস্ট করে বাজিমাত সৃষ্টি হয়েছিল। যতগুলো পণ্য এনেছিলাম তার সব গুলোয় বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার নিয়ে আসলাম।এভাবেই শুরু। গল্পটি বলছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া যুথি। করোনায় যুথির ভাগ্য বদলে দিলো হয়ে গেলেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
আমাদের দেশে নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবিলা করতে হয় না । তবুও অনেক নারী আছেন যারা জীবন সংগ্রামে লড়াই করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তেমনি একজন নারী উদ্যোক্তার গল্প এটি।
সুরাইয়া যুথি। জন্ম বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার পারতিতপরল গ্রামে সেখানেই বেড়ে ওঠা। ব্যবসায়িক বাবার দুই সন্তানের মধ্যে তিনি বড়। সদ্য লেখাপড়া শেষ করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে। তবে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবেই বেশি পরিচিত।
শুরুটা হয়েছিল সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে। করোনায় যখন সবাই ঘরবন্দী, অলস সময় কাটাচ্ছিলেন তখন তিনি সাবলম্বী হওয়ার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন কিছু একটা করার নেশায়,অলস সময় পাড় করার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের।তাই তিনি ঘরে বসে শুরু করে দিলেন অনলাইন ই শপিং ব্যবসার এবং অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি হয়ে উঠলেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
অনেক মেয়েই করোনার সময়ে অলসতায় পার করলেও তিনি হতে চেয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি বলেন,বর্তমান বেকার পরিস্থিতিতে সবাইকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। চাকরির জন্য অপেক্ষা করে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করা অনেক ভালো বলে আমি মনে করি।ফলে কাউকে আর হতাশ হইতে হবে না। এভাবে নিজে সাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাইলে খারাপ কি তাতে।এই সব বিবেচনা করে জামা,শাড়ি, পাঞ্জাবি, ব্যাগ,কসমেটিকস ঢাকা,নরসিংদী ,কুমিল্লা, টাংগাইল,ছাড়াও বাহিরের দেশ চায়না থেকেও পণ্য আমদানি করেন আর সেগুলো নিজের ফেইসবুক পেজ ‘সাজ কালেকশন’গ্রুপ এবং অফলাইনেও বিক্রি করেন।
কাপড়, ব্যাগ ও ঘড়ি ইত্যাদি অন্যন্যা জিনিস ক্রয় থেকে ডেলিভারি দেওয়া পযন্ত তিনি একাই সব করেন। তিনি রংপুর এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি দেন।
যুথির পণ্যের একটা বড় ক্রেতা হলেন তরুন শিক্ষার্থীরা।তার কালেকশনে যেমন ১০০ টাকার পণ্য আছে ঠিক তেমনি ৫০০০ টাকার ও পণ্য পাওয়া যায়।মাসে প্রায় ১ লক্ষ পণ্য বিক্রয় করেন। তিনি ফেইসবুকে তার পেজে পজিটিভ রিভিও দিয়ে সবার কাছে ভালো একটা সাড়া পেয়েছেন।
অনলাইন ডেলিভারি প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে সুরাইয়া যুথি বলেন,সব কাজই কঠিন, বিশেষ করে টাকা ইনকাম করা সহজ ব্যাপার না,সেটা যে সেক্টরেই হোক না কেন।যার যার জায়গা থেকে তার কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরনের চেষ্টা করে।আমিও ঠিক সেরকম টাই চেষ্টা করছি।তবে আমি খুবই আনন্দিত যে অল্প সময়েসবার সাড়া পেয়েছি। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে কিছু নীতিবাচক বাক্য কানে আসলেও ওসব গায়ে লাগায় না।কারন সবাই আপনাকে পছন্দ করবে এমন কোন কথা নেই। প্রতিবন্ধকতা বলতে ডেলিভারির ব্যাপার, জরুরি ডেলিভারি গুলো একটু চাপ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তবে সেগুলোও আমি মানিয়ে নিতে করে পারি,কারন কাজ ফেলে রাখতে আমি নিজেই পারি না।যতক্ষন হাতে কাজ আছে মনেহয় করে ফেললেই ঝামেলামুক্ত হয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমার পণ্যর বড় ক্রেতা হলেন শিক্ষার্থীবৃন্দ। সব সব পণ্য শিক্ষার্থী দের বাজেটের ক্রয়সীমার মধ্যে। যাতে তার অল্প বাজেটের মাঝে তাদের পছন্দের জিনিসটা হাতের কাছেই পেয়ে যায়।।বাজারে চাহিদা বেশ ভালো। কারন আমিও সেভাবেই পণ্য বাছাই করে আনি।যেসব জিনিসের চাহিদা ভালো ওসবই বার বার আনার চেষ্টা করি।সকলে আমার পণ্যর ভালো রিভিউ দেন।
এম কে পুলক আহমেদ/