মোঃ শরীফুল ইসলাম, বেরোবিঃ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বেরোবি) দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবিতে ” উত্তরবঙ্গ ব্লকেড ” কর্মসূচি পালন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে কর্মসূচি শুরু হয়ে মডার্ন মোড় মহাসড়কে দুপুর ১২ টায় অবস্থান করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরপর দু’বার অর্থাৎ প্রথমবার পাঁচ কর্মদিবসের ও পরবর্তীতে ১৪ সেপ্টেম্বর ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেও কোনো ইতিবাচক ফল না পাওয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। উক্ত সময়ে শিক্ষার্থীরা উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় মহাসড়ক অবরোধ করে বক্তৃতা ও প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত করেন। আবু সাইদের ক্যাম্পাসে, বৈষম্য চলবে না; আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; জেগেছে রে জেগেছে, বেরোবিয়ানরা জেগেছে; ভিসি নিয়ে তাল-বাহানা, মানিনা মানবো না; লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে; ইত্যাদি স্লোগান শিক্ষার্থীদের মুখে শোনা যায়।
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ সরকার পতনের কয়েকদিন পর থেকেই শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু সংখ্যক ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের চাওয়ায় নিজ উদ্যোগে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করেন কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেননি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৮ আগস্ট খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। কিন্তু ভিসি না থাকায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অদ্যাবধি ব্যাহত রয়েছে। ঢাবি, রাবি, জাবি, চবি, জবি প্রমুখ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি দিলেও বেরোবিতে এখনও ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বৈষম্য হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। তাই তারা আজকের এই “উত্তরবঙ্গ ব্লকেড” কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়ার পর আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ গতিশীল হয়েছিল। কিন্তু সেই আবু সাঈদ এর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা পরপর দুইবার ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের আহ্বানে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি।এটা কি প্রহসন নয়? আজকের স্বৈরাচারী পতনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আবু সাইদ ও বেরোবি ক্যাম্পাস। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হলেও আমরা ভিসি পাচ্ছি না। আবু সাঈদ বৈষম্য চাননি, আবু সাঈদ বৈষম্য নিরসন করতে চেয়েছিলেন। এমনকি বৈষম্য প্রতিহত করতে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন তারপরও কেন এত বৈষম্য?
উক্ত কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু সঈদ লিয়ন বলেন, আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করছি, এটা তাদের যৌক্তিক দাবি। যদিও ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে জটিলতা দেখা দিচ্ছে, তারপরও বেরোবিতে অতি শীঘ্রই ভিসি নিয়োগ দিতে হবে, এক্ষেত্রে আমি উপদেষ্টামন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেই সাথে আমাদের রংপুর কে পিছিয়ে রাখার যে ষড়যন্ত্র, বৈষম্য তৈরি করেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার, সেই বৈষম্য নিরসন এখনই করতে হবে। এটাই বৈষম্য নিরসনের উপযুক্ত সময়।
শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে পুনরায় শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে চান। তাদের মেধা ও মননশীলতার মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সুষ্ঠু ও সুন্দর অসাম্প্রদায়িক দেশ তৈরির কারিগর হতে চান।