বেতন-ভাতা ও ছুটি নিয়ে মাস্টারের প্রতি ক্ষোভের জের ধরে ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমভি আল বাখেরা জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
এর আগে চাঁদপুরের জাহাজে সাতজন খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত ইরফানকে মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় ইরফানের ব্যবহৃত মোবাইল, ঘুমের ওষুধ, নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল, ব্যাগ, রক্তমাখা জিন্সের প্যান্ট ও গ্লাভস জব্দ করেছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান জানিয়েছেন, জাহাজের মাস্টারের প্রতি তার খুব ক্ষোভ ছিল। আর সেই ক্ষোভ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড। তার ভাষ্যমতে, তিনি প্রায় ৮ মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছিলেন। সেই জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতেন না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন। এ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ক্ষোভ ছিল।
শুধু তাই নয়, জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনা কারণে রাগারাগি করতেন এবং কারোর ওপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে ইরফান জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করত না। ফলে ইরফানের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ইরফান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন।
ইরফান জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজ নিজ কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তারকৃত আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙর করে। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে ৩টায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনি ভেবে দেখেন, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। ফলে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামের এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়ে। পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান। শেষে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। হত্যায় জড়িত ইরফানকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার রাতে চিতলমারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে চাঁদপুর আদালতে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজ থেকে সাতজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতে হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ মামলা করেন। নিহতরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী।