The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বেরোবি প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের বাতিঘর খ্যাত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর উত্তরের এই উদ্দীপ্ত আলোর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। একে একে ১৬ বছর পেরিয়ে ১৭ বছরে পা দিতে যাচ্ছে উত্তর জনপদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)।

শনিবার (১২ অক্টোবর) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০০৮ সালের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তবে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্ভোধন করা হয় ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল। শুরুতে ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শহরের লালকুঠি এলাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু হয়। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারী রংপুর শহরের লালবাগ ও মডার্ন মোড় এর মাঝামাঝি এলাকায় ৭৫ একরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এছাড়া উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ড. ওয়াজেদ রিচার্জ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এখানে শিক্ষকতা করছেন ১৮৪ জন এবং শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় আট হাজার। নির্মাণাধীন একটি ছাত্রী হলসহ মোট চারটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, চারটি একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মসজিদ , অস্থায়ী মন্দির, ক্যাফেটেরিয়া, স্টোর হাউজসহ আবাসিক স্থাপনা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল ধূ ধূ মরুময়। কিন্তু সেই ক্যাম্পাসটি এখন সবুজ হয়ে ওঠায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ, সাধারণ জনগণের চোখের ও মনের প্রশান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির গাছ যা পুরো ক্যাম্পাসটিকে সবুজ সমারোহে পরিণত করেছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নাহিদা হাসান দীপা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হল জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র।স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক আশা, প্রত্যাশা নিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমার পরিচয়, আমার আবেগ। এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। একজন শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। আমিও তার বাইরে নই। শিক্ষা ও গবেষণায় দেশ-বিদেশে অনন্য হয়ে উঠুক আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে গড়ে উঠুক শিক্ষার শতভাগ পরিবেশ। সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এগিয়ে যাক আমার,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ আমান বলেন, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের অন্যতম একাট সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬ বছর পেরিয়ে ১৭ বছরে পদার্পন করছে আমাদের প্রানের বেরোবি। যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কিছুটা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি, অবৈধভাবে হল দখল, সাধারণ শিক্ষার্থী নিপীড়ন, চাদাবাজি, অবৈধভাবে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মানসম্মত পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পাচ্ছে। তাছাড়া অনেকে প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পদে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যাসমূহ নিরসন করলে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব দরবারে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

বাংলা বিভাগের সাদিয়া সিদ্দিকী নির্জাস বলেন, দেখতে দেখতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখন ষোড়শী তরুণী।এই অল্প সময়ে দেশ তথা পুরো বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু দেশ না দেশের বাইরেও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রেখেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। আমাদের ক্লাসরুম সংকট, গবেষণা করবার মতো কোন রিসার্স ইন্সটিটিউট নেই, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, টিচার সংকট এত সব সংকটের মাঝেও আমরা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাইব এই যে সমস্ত সংকট এই সংকটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত কাটিয়ে উঠুক।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ঈসলাম ইমন বলেন, ২০০৮ সালে ১২ অক্টোবর উত্তরের জনপদ রংপুরের শিক্ষাব্যবস্থাকে জাগ্রত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ৭৫ একরের এই প্রতিষ্ঠানটি সবুজ গাছগাছালিতে ভরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বর্তমান প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা করি শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন করা, ক্যাম্পাসে রাজনীতি মুক্ত করা, শিক্ষকদের মধ্যে অপরাজনীতির চর্চা বন্ধ করা, সেশনজট নিরসন করা, সংস্কৃতি চর্চার জন্য অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা করা, আইসিটি ভবনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং সর্বোপরি প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারও সমাবর্তন হয়নি; সমাবর্তনের ব্যবস্থা করা।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হাসান বলেন, শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম এবং নিজ গুণাবলিতে দেশ-বিদেশে অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। হাসিকান্না, আনন্দ-বেদনা, আড্ডা—সবকিছুর অন্যতম কেন্দ্রস্থল। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। রাজনৈতিক কিংবা দলীয় মতাদর্শ যেন কোনোভাবেই আমাদের সংকুচিত করে না দেয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নানাবিধ সংকটের মধ্যে থেকেই সম্ভাবনা কে সম্ভবে পরিণত করছে বেরোবিয়ানরা। বেরোবিয়ান হিসেবে আমার দ্বিতীয় ‘ভার্সিটি ডে ‘ উদযাপন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর প্রথম দিন থেকে দিন দিন প্রিয় থেকে প্রিয়তর হচ্ছে আমার এই মায়ার ক্যাম্পাস।বেরোবি আমার পরিচয়,আমার অস্তিত্ব। ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি রইলো আমার শুভকামনা।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.