চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) এ পরীক্ষার আয়োজন করে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের চাকরির পরীক্ষা নিয়ে অনেক সময় নানা প্রশ্ন উঠলেও বিসিএস পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ করা হয়নি। তবে বিসিএস পরীক্ষার আসনবিন্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিছু চাকরিপ্রার্থী। তাঁরা এটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলছেন। তবে পিএসসি বলছে, এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, সে জন্য তারা শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে।
বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সাধারণত আবেদনের জন্য এক থেকে দেড় মাস সময় দেওয়া হয়। এই সময়ে চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেন। আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা জমা দিতে হয়। টেলিটক প্রিপেইড নম্বরের মাধ্যম আবেদন ফি বাবদ ৭০০ টাকা পাঠাতে হয় ১৬২২২ নম্বরে। আবেদনের টাকা জমা দেওয়ার সময় অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করা হয়। এ সুযোগ নিয়ে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক হল, লাইব্রেরিভিত্তিক কিছু গ্রুপ ও ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের চাকরিপ্রার্থীরা একত্র হয়ে একই সময়ে টাকা জমা দেন। এ কারণে তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্রও একই প্রতিষ্ঠান ও কক্ষে পড়ে।
গত ২৭ মে অনুষ্ঠিত হয় ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলে তিনি যে কক্ষে ছিলেন, সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের রোল সিরিয়াল অনুসারে থাকায় তাঁরা পাশাপাশি বসতে পেরেছিলেন। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে একই সঙ্গে বিসিএস প্রস্তুতি নিতেন। সেখানেই একত্র হয়ে গ্রুপ খুলে একসঙ্গে আবেদনের টাকা জমা দেন তাঁরা। ফলে তাঁদের সিটও একই কক্ষে আসে।
আশিক আহমেদ নামের এক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের পথ বের হয়েছে—‘একসঙ্গে আবেদন করো, পাশাপাশি সিট ফেলো’। আগে এটা কম ছিল, কিন্তু এবার সেটা মহামারি আকারে দেখা গেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জন একই সঙ্গে আবেদন করে টাকা জমা দেন। এ কারণে দেখা যায়, একটি কেন্দ্রে সবাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলাফলে এর প্রভাব পড়তে পারে। দেখা যাবে, যাঁরা পাস করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের।
কীভাবে টাকা জমা দিয়ে একই সঙ্গে সিট নেন পরীক্ষার্থীরা—বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন আরেক চাকরিপ্রার্থী মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফেসবুকে বা হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে ৫০ থেকে ১০০ জন একত্র হয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন, তাঁরা কখন আবেদনের টাকা জমা দেবেন। যে সময়ে কেউ টাকা জমা দেন না, তেমন একটা সময় নির্ধারণ করেন তাঁরা। যেমন রাত তিনটা। যেহেতু এই সময়ে অন্য সাধারণ প্রার্থীরা ফি পরিশোধ করেন না, তাই একই গ্রুপের এই বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর আসন একই কেন্দ্র, এমনকি একই কক্ষে পড়ে। কারণ, ফি পরিশোধের পরপরই রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যায়, যা আসনবিন্যাসে ব্যবহার করা হয়।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, প্রিলিমিনারির চেয়ে লিখিত পরীক্ষায় বেশি সুবিধা পাওয়ার আশায় এভাবে পাশাপাশি সিট নেন পরীক্ষার্থীরা। প্রিলিমিনারিতে পাসের পর যখন দেখেন তাঁদের সিট পাশাপাশি, তখন অনেকে ভাগাভাগি করে প্রস্তুতি নেন। কেউ গণিত অংশ বেশি পড়েন, আবার কেউবা বাংলা অংশ বেশি পড়েন। অনেকে আবার নিজেদের মধ্যে ইশারা ভাষা তৈরি করে নেন। সেই ইশারায় পরীক্ষার হলে যোগাযোগ করেন।
বর্তমানে একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করছেন তামিম রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেও তিনটি বিসিএসে এভাবে গ্রুপ খুলে একসঙ্গে সিট নিয়েছিলাম। প্রতিটি ক্যাম্পাসে এটা প্রায় অঘোষিত নিয়ম—একটা গ্রুপে কয়েকজন একত্র হয়ে পড়াশোনা করো, এরপর একসঙ্গে সিট নিয়ে পাশাপাশি পরীক্ষা দাও। তবে এবার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পিএসসির নতুন করে ভাবা উচিত। আবেদনের সময়ের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে রোল নম্বর দেওয়া উচিত। তাহলে কারও পাশাপাশি সিট পড়বে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আসনবিন্যাসে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে টেলিটকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা এটি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। এটা মূলত কিছু প্রার্থীর সুবিধাবাদী মনোভাবের প্রকাশ। এ রকম সুযোগ তাঁরা কেন নেবেন? আমরা এটি সমাধানে কাজ করছি। আশা করছি, এ সমস্যা আর হবে না।