শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কোন শিক্ষার্থী যদি বিদেশে গিয়ে নতুন ভাষা-সংস্কৃতি কিংবা অন্য কোন একটা কাজ করে ঘুরে-ফিরে এসে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। সেটা বিবেচনা করা দরকার এবং এটা নিয়ে আমাদের ভাবার সময় এসেছে। আমরা বলছি, কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে তাকে ভর্তি করা হবে। কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা ছাড়া ভর্তির পক্ষে নয়। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যাতা প্রমাণ দিয়েই ভর্তি করা হবে।
আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর উদ্যোগে ‘Future of Education in Bangladesh Prespective’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি িএসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষায় বয়সের বাঁধা তুলতে আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। আমরা কারিগর শিক্ষার প্রসার চেয়েছি, এখানে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে ২০০৯ সালে শতকরা ১ ভাগের কম থেকে বর্তমানে শতকরা ১৭ ভাগের মতো আসতে পেরেছি কারিগরি ভর্তির হার। আর ২০৩০ সালে শতকরা ৩০ ভাগ আর ২০৫০ সালে শতকারা ৫০ ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আর এটি অসম্ভবও কিছু নয়।
“জার্মানিতে শতকরা ৫০ ভাগ আছে কারিগরিতে ভর্তির হার এবং সেই জায়গায় আমাদের যেতে হবে। তবে আমাদের একটা বড় সমস্যা আছে- আমাদের চিন্তা ও মনাসিকতায়। আমাদের সামাজিক যে দৃষ্টি ভঙ্গি তার পরিবর্তন দরকার। মনে করা হয়, কারিগরি শিক্ষাটা কম মেধাবীদের জন্য এবং যারা আর্থিকভাবে অচ্ছতা রয়েছে তাদের জন্য সেটি। এটা একবারেই ভুল। পৃথিবীতে যত দেশ উন্নত হয়েছে তারা কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিয়েই করেছে এবং এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশলীদের একটি বড় ভূমিকা রাখা দরকার।”
তিনি বলেন, আমরা অতি সম্প্রতি কারিগরিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে বয়সের বাঁধা তুলে দিয়েছি। আমাদের যেকোন জায়গায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। আমরা এসব প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয় বলছি এবং সেখানে জ্ঞানচর্চা হয় ও মুক্তি বুদ্ধির চর্চা হয়। কিন্তু তাহলে সেখানে কেন আমরা বয়সের বাঁধা দিয়ে সবকিছু আটকে রেখেছি? আমাদের কী এটা নিয়ে ভাবার সময় আসেনি?
“পৃথিবীতে এটা খুব জনপ্রিয় যে শিক্ষার্থীরা ১০ কিংবা ১২ বছর পড়াশোনা শেষে করে এক-দুই কিংবা ৩ গ্যাপ ইয়ার নিচ্ছে। এসময় সে গিয়ে দুনিয়া এক্সপ্লোর করছে, সে গিয়ে কোন দেশে নতুন ভাষা, সংস্কৃতি শিখছে, অথবা সেকোন একটা কাজ করে ঘুরে-ফিরে দেশে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এতে করে তাদের দেখার চোখটা তৈরি হয় এবং বোঝার মনটা তৈরি হয় এবং সেটা থাকে তাকে তার পরবর্তী জীবনের জন্য অনেক বেশি ভালোভাবে তৈরি করে। যেটা ১৮ বছরে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে নিয়ে গিয়ে সেই শিক্ষাটা দেওয়া সম্ভব না। এই যে সুবিধাটা আছে। তাই কেন তাকে বলবো যে উচ্চমাধ্যমিকের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে? ”
তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের শেষে সে যদি এক বছর কিংবা ২ বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আর মাঝখানে সে অন্যকিছু করেছে কিনা তা বিবেচ্য বিষয় নয়। করেনি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, অন্য কোথাও কাজ করেছে কিনা বিবেচ্য বিষয় নয়। তাকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে হবে। এবং তাকে একবার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে এবং না ঠিকলে শেষ, আর সুযোগ দেওয়া হবে না।
“আমরা এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে কেন রেখে দিচ্ছি? আর তাতেই অনেকের অনেক সম্ভবনা আছে কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত করছি। আমরাতো বলছি না যে সে কাঙ্ক্ষিত যে মান বিশ্ববিদ্যালয় চায়, কাঙ্ক্ষিত যে যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় চায়, আমরা বলছি না যে সেই যোগ্যতা ছাড়াই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এবং কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা সাপেক্ষেই তাকে ভর্তি করা হবে। তাহলে কেন কি কারণে তাকে ভর্তি করা যাবে না। এটা একটা আমাদের ভেবে দেখবার সময় এসেছে।”