বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি: দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও আন্দোলন সংগ্রাম শেষে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পাচ্ছেন ঢাকার সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের চলমান সংকট নিরসন এবং স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করবেন।
কমিটির প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান। গঠিত এ কমিটি আগামী চারমাসের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করবে বলে জানানো হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের কছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি সর্ম্পকে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির মতামত ও সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করা।
সাতটি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে কলেজগুলোর স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক একটি কাঠামোতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া বিকল্পগুলো বিবেচনা।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় খসড়া সংবিধি প্রণয়ন করা। কমিটির সুপারিশে এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোপরি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা।
কমিটি তার কার্যক্রমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনকে সম্পৃক্ত করবে। আগামী চারমাসের মধ্যে কমিটি কাজ সম্পন্ন করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীর সাতটি কলেজকে রাতারাতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলো হচ্ছে— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এরপর থেকে অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরিচালিত হচ্ছে।
তবে অধিভুক্তির পর থেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কলেজ সমূহের শিক্ষার্থীরা। রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না হওয়া, সময়মতো পরিক্ষা না হওয়া, নির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, পরিক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়, স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় না থাকা সহ আরো অনেক অভিযোগ ছিলো শিক্ষার্থীদের।
মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা বা যথাসময়ে পরিক্ষা আয়োজনসহ আরো নানা দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন। মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার, সমাবেশ, অবরোধ, ব্লকেডসহ আরো নানা উপায়ে রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
সর্বশেষ, ৫ই আগস্টের রাজন পটপরিবর্তনের পর থেকে বিগত কয়েকমাস যাবৎ সাত কলেজকে নিয়ে আলাদাভাবে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের দাবি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। টানা কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আশ্বাসে আন্দেলন শিথিল করে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এ কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।