মোঃ হাছান: ছাত্র রাজনীতি নিয়ে পূর্বে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ থাকলেও এখন গলার কাটা। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন, ধরপাকড় ছিল যেন নিত্য দিনের ঘটনা। ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো চলেছেন তাদের সহযোগিতা করতে প্রশাসন ছিল বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক ছাত্র নেতাকর্মীরা আর প্রশাসন ছিল এক সুতোয় গাথা। কত অজস্র ঘটনা কত কাহিনী সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের কিন্তু তার বিচার হয়েছে গুটি কয়েক। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পাল্টে গেছে বিষয়টি কিন্তু তেমন না, এখনো তারা রাজনৈতিক ছাত্র নেতাদের দেখলে করছেন নম নম!
মানে বুঝা খুব সহজ যখন কোন সাধারণ শিক্ষার্থী তার জরুরি প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দ্বারস্থ হন তখন প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে পিওন সবাই সাহেব বেশে থাকেন। আর শিক্ষার্থীদের লাল ফিতার ফাইলের প্যাচের মত ঘুরাতে থাকেন। কিন্তু যখন কোন ছাত্র নেতা সেই একই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন তখন তার জন্য থাকে চা, বিস্কুট ও এক গ্লাস বিশুদ্ধ জল। মাঝে মাঝে ছাত্র নেতাদের দাওয়াত থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন খাসির মাংসর সাথে বিরিয়ানি জোটে কপালে। এখন আপনারা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লাভ কী ছাত্র নেতাদের আতিথেয়তা করে, ওইযে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন যোক্তিক আন্দোলন দমাতে ছাত্র নেতাদের লেলিয়ে দেওয়া যায়। আর ছাত্র নেতারা খুবই অনুরাগী, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে রাতে গেস্ট রুমে ডাকা, রুমে গিয়ে বকাঝকা করা আর তাতেও কাজ না হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে বেধরপ মারধর, বেঁচে থাকলে ভালো আর মারা গেলে তো দলীয় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছেন। তা নাহলে বুয়েটের রাজনৈতিক দলের ছাত্র নেতারা জেলে বসে কীভাবে অনলাইনে ক্লাস করেন।
যাইহোক বিশ্ববিদ্যালয় যদি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় যেসব সুবিধা পাবেন শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে উঠতে গেলে বাধ্যতামূলক রাজনীতি করতে হবে বলে মৌখিক চুক্তি দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের । বাংলাদেশর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট তাই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে বেগ পোহাতে হয়। হল প্রশাসন নামে মাত্র একটি সিট বরাদ্দ দিলে, সিটে উঠার জন্য ছাত্র নেতাদের ধারনা দিতে হয়। ছাত্র নেতারা মৌখিক চুক্তি বা আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে সিটে উঠান।
প্রতিদিন রাতে যেতে হবে না গেস্ট রুম বা টর্চার সেলে। হলের টর্চার সেল বা গেস্ট রুম হলো একটা বিশেষ জায়গা যেখানে রাজনৈতিক দলের ছাত্র নেতারা মাদক সেবন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের ম্যানার শেখানোর নামে মানসিক ও শারিরীক টর্চার করে থাকেন । ছাত্র নেতারা তাদের প্রভাব বিস্তার করেতে গন রুম ও গেস্ট রুম কালচার প্রচলন করেন।
যখন তখন প্রোগ্রামে যাওয়া লাগবে না অথবা ভাইদের জন্মদিনে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকতে গেলে প্রথম শর্ত বাধ্যতামূলক রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতে হবে তা না হলে যেই হল গেট দিয়ে হলে উঠবেন সেখান দিয়ে বিদায় নিতে হবে, হলে উঠার কিছুদিনের মধ্যে। আমার মনে আছে হলে উঠার পরে রাত ১২:০০ ঘুমের মধ্যে থেকে ডাক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্র নেতারা। রাজনৈতিক ছাত্র নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় হলে ভাই সম্বোধন করা হয়, হলে অসংখ্য ভাই পাওয়া যাবে যাদের জন্মদিন পালন করা বাধ্যতামূলক বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য।
হলের ডাইনিং এ মানহীন খাবার গ্রহণ করতে হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হলের ডাইনিং ম্যানাজার ছাত্র নেতাদের মত অনুসারে নিয়োগ করে থাকেন হল প্রশাসন। যার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতারা ডাইনিং থেকে ফ্রি খাবার গ্রহণ করেন এবং বদৌলতে ডাইনিং ম্যানাজার তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাঁশি , পচা ও মানহীন খাবার পরিবেশন করেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের। আর তার প্রতিবাদ কেউ করতে চাইলে ছাত্র নেতারা তা কঠোরভাবে দমন করেন।
ক্লাসের মাঝে যেতে হবে না মিটিং অথবা মিছিলে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে শিক্ষক রাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ ছাত্র নেতারা যখন রাজনৈতিক শিক্ষকদের শেল্টার না দিবে তখন শিক্ষক রাজনীতি চর্চায় আগ্রহ দেখাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা অহরহ যে কোন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর আগমন ঘটলে সেদিন ক্লাস বন্ধ, শিক্ষকরা বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের, নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
তবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে কিছু অসুবিধাও আছে হলের ডাইনিং থেকে বিনামূল্যে খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন না, অবৈধভাবে হলের সিট দখল করতে পারবেন না। যাইহোক ছাত্ররাজনীতির গৌরব ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খচিত কিন্তু বিগত বছরগুলোতে যেই রাজনীতি চলছিল তা নিঃসন্দেহে অপ-রাজনীতি। এমত রাজনীতি যেন আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না আসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।