The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

বিকেলের আড্ডায় বেরোবির ৭৫ একর

বেরোবি প্রতিনিধিঃ পাখিরা যেমন সন্ধ্যা হলেই আপন ঘরে ফিরে তার নিড়কে আলোকিত করে। এখানে এসেই যেন পাখিরা সারাদিনের ক্লান্তি অবসানের সু্যোগ পায়। ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন,ক্লান্তি অবসানের মাহেন্দ্রক্ষণ মুহূর্তের দেখা পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিকেলের আড্ডায়। অবাধ স্বাধীনতাময় এই শিক্ষাজীবনে আড্ডা থেকে অর্জিত হয় অনেক কিছু। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ নানা ব্যস্ততার পর বা এসবের ফাঁকেও আড্ডা চলে অবিরত।আবার এই আড্ডা গুলো অনেক সময় কারো জীবনে ঘুরে দাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

আড্ডা ছাত্র জীবনের একটা অংশ। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই আড্ডাটা যেন বেশিই হয়। ক্যাম্পাস একটি শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ-অনুভূতির জায়গা। আর এই ক্যাম্পাস জীবনে আড্ডা ছাড়া জীবন অলস ও অসাড় মনে হয়। ক্যাম্পাস জীবন যেন বন্ধুত্ব আড্ডা, শিল্প-সাহিত্য ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় ঘেরা।

কখনো গানে গানে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের উন্মাদনা, কখনো ছোটখাটো খেলায় মেতে ওঠে তারুণ্য ভরা সবুজ প্রাণ। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই মুখরিত হয় শিক্ষার্থীদের আড্ডা আর গানে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কিংবা পড়ন্ত বিকালে ক্যাম্পাসে ফুটে ওঠে এক দারুণ প্রতিচ্ছবি।

আর বিকেলের আড্ডায় উত্তর বঙ্গের অক্সফোর্ড খ্যাত রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সবুজ ক্যাম্পাস শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সর্বদায় মুখরিত থাকে । উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ যেন প্রাণের উল্লাসে দেড় যুগ ধরে ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে চলছে আপন গতিতে। তবে দিনের সকল কর্মব্যস্ততা আর ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে ক্যাম্পাসে অবসরে বিকেলে দেখা মেলে তরুণ তরুণী কিংবা বিভিন্ন বয়সের ক্যাম্পাসে আগত দর্শনার্থীদের আড্ডায়। আর এই অবসরের আড্ডায় প্রতিদিন যেন আরো নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বৃক্ষের জাদুঘর নামে পরিচিত এই সবুজ ক্যাম্পাস।

দিনের অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত থাকে ক্লাস-পরীক্ষা আর পড়াশোনা নিয়ে। দিন গড়িয়ে বিকেল বা গোধূলি লগ্নে এসে অবসরের দেখা পায় শিক্ষার্থীরা। আর এই অবসর সময়ে আড্ডায় মেতে ওঠে হাজারো শিক্ষার্থী। আড্ডার কেন্দ্রস্থলগুলো শিক্ষার্থীদের আড্ডায় প্রাণ ফিরে পায় তখন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর, শহীদ মিনার,বঙ্গবন্ধু ম্যূরাল, গ্যারেজ রোড,দেবদারু রোড,কৃষ্ণচূড়া রোড,বকুলতলা রোড, পার্কের মোড়,হতাশা বা ভিসি চত্বরের মত জায়গাগুলোতে বন্ধুদের খুনসুটি আর আড্ডা চলতে থাকে। এই সব রোড গুলোতে দলবেধেঁ অনেকে বিকেলের দিকে গান করে বেড়ায়। এই আড্ডাবাজি আর দুষ্টুমির ভিড়ে তারা যেন ভুলে যায় পূর্বের ক্লান্তিময় দিনটির কথা।

পার্কের মোড়ের আড্ডাগুলোতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শুরু হয় এক একটি জীবনের গল্প। এ গল্প স্মৃতি রোমন্থনের, সফলতা-ব্যর্থতার, পাওয়া আর না পাওয়ার সুখ-দুঃখ কিংবা বিরহের। আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বির্তক।

ক্যাম্পাসের এই আড্ডাগুলোতে শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা বয়স ও পেশার মানুষের সমাগম হয় বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের আগমনের কারণ ও উদ্দেশ্যও ভিন্ন ভিন্ন। আবার কেউ বা ছুটে চলে আসেন প্রিয় জনের সাথে নিছক আড্ডা-গল্পে সময় পার করার জন্য।

ক্যাম্পাসের এই আড্ডা গুলো বিকেল শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত।বিকাল গড়িয়ে অপরাহ্নে এসব স্থানে ক্যাম্পাসের মাঠের বিভিন্ন জায়গায় চলে মন মাতানো সব গল্প। এই আড্ডার ভিড়ে সন্ধ্যায় যেন মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর, প্রাঙ্গণ ও মোড়। এই আড্ডায় পড়াশোনাসহ গান, কবিতা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই স্বাধীনতা স্মারক, পদ্মরাগ, মতিচূর, বিজয় একাত্তর, কাঞ্চন কিংবা শেখ রাসেল বা মিডিয়া চত্বর ইত্যাদি ছাউনিতে দলবেধেঁ বসে সবাই একসাথে গলা ছেড়ে গান গাওয়া এসকল কিছু মিলে ক্যাম্পাসটি যেন শিল্প, সাহিত্য, বন্ধুত্ব, আড্ডা ও ভালবাসার মায়ায় ঘেরা।

বিকেলের আড্ডার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স এর শিক্ষার্থী লুবনা হক মিমি বলেন, এই ৭৫ একর আমাদের অত্যন্ত আবেগের ও প্রাণের জায়গা। ক্যাম্পাসে একসময় বিকেল বলতেই মনে পড়ে বন্ধুদের সাথে কাটানো স্নিগ্ধ সময়, স্বাধীনতা স্মারক মাঠ কিংবা বঙ্গবন্ধু হলের সামনের ফাঁকা জায়গা তে গানের আসর কিংবা আড্ডা। যদিও ব্যস্ততায় এখন বিকেল কাটে রাজপথের স্লোগান মুখরে,কিংবা চায়ের আড্ডায়।

ভালোবাসার এই ক্যাম্পাসে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত ই সেরা।
ভালো থাকুক এই কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর কাশফুলের ক্যাম্পাস।

আড্ডার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল বলেন, ক্যাম্পাসে বিকালে কাটানো প্রতিটি বিকেল কাটে অনেক মধুর। ভিন্ন ভিন্ন জেলার বন্ধুদের শিক্ষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারি বিকালে আড্ডায় কোনো কোনো বন্ধু গান গাইতো, কৌতুক বলতো।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আক্তার মৌরী বলেন, বিকেলবেলাটা আমাদের অন্যরকম কাটে।ক্লাস শেষে সেন্ট্রাল মাঠে বসে আড্ডা দেওয়া হয়।কখোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্যাফেটেরিয়া রোড পার হয়ে আমরা হতাশা চত্বরে পা বাড়াই।শান্তি,হাসি,আনন্দ আর ঝগড়ার মিশ্রণে বিকেল বেলাটা! যেখানে গল্পের কোনো শেষ নেই সেখানে অনুভূতি প্রকাশের বিশেষ কোনো শব্দ নেই।শেষ বেলার ক্লাসে ৫ঃ১০ এর বাস টা ধরার জন্য দৌড়ানো মাঝে মাঝে ভাবায়। ” এ বিকেল,কমলা সুন্দরীতে করে ঘরের ফেরার তাড়া! শেষের পথে।

গানে গানে মুখরিত হয় তারুণ্যের প্রাণোচ্ছলতা। যৌবনের উচ্ছলতায় সিক্ত ক্যাম্পাসের এই সকল শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট একটি গণ্ডির সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ। গান, নাচ, বিতর্ক, আড্ডা, খেলাধুলা আর মতের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির মাতামাতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সর্বদা বিরাজ করে সাংস্কৃতিক আবহ। কেউ পড়াশোনায় মনোযোগী, কেউ রাজনীতি-সংগঠন করছে, কেউ বা মেতে আছে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে একটু কোলাহলমুক্ত ভালবাসার অন্য ভুবনে, কেউ বা আবার এসব কিছু বাদে আড্ডা দিতেই ব্যস্ত।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.