ডেস্ক রিপোর্ট: একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি এক আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির কর্মী-সমাবেশে উপস্থিত থাকার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচরে বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার একটি সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হত্যা মামলার আসামি একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এরকম একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সোমবার সকালে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশের মঞ্চে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহসিন উদ্দীন সোহেল বেপারীকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার সঙ্গে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যান।
এছাড়া সোমবার দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা বেপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের এক কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভা মঞ্চেও বিএনপি নেতা নুরুদ্দিন মোল্লার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দেখা গেছে ওই চেয়ারম্যানকে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর এলাকার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮নং ও শিবচরের ভাণ্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নাইমুর রহমান হত্যা মামলার ৩৭নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী। অন্যদিকে সজীব হাওলাদার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭৪নং আসামি।
শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এরপর থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না। ৫ আগস্টের পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছেন।
যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে সোহেল বেপারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে নুরুদ্দীন মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছাত্র-জনতা মারা গেছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেই আসামিদের সঙ্গে বিএনপি নামধারী আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের সখ্যতা রয়েছে। তারা অপতৎপরতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।