The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪

বাড়ছে না ভাতা, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নাভিশ্বাস

দেশে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যসহ সকল কিছুর দাম। এতে জীবন নির্বাহের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে সমানুপাতিক হারে বাড়েনি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা। ফলে কষ্টে কাটছে নবীন চিকিৎসকদের জীবন।

সিনিয়র চিকিৎসকদের পরামর্শে দিন-রাত চিকিৎসা সেবা চালু রাখেন হাসপাতালের এসব প্রাণভোমরা। সরকারি ছুটিসহ অন্যান্য উৎসবেও দায়িত্ব পালন করেন তারা। তবে নিবেদিতপ্রাণ এসব স্বাস্থ্যকর্মীর কপালে জুটে না কোনো বোনাস।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. জেসিয়া জুই বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়া হাসপাতালের সেবার কথা চিন্তা করা যায় না। আমরা সপ্তাহে কমপক্ষে ৭০-৮০ ঘণ্টা কাজ করি। কখনও কখনও তারও বেশি কাজ করতে হয়। অনেক সময় একটানা ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টাও কাজ করি। আমাদেরকে সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই। মাসে একদিন ছুটি পাই কিনা তাও সন্দেহ। এভাবে কাজ করার পরও আমাদের ভাতা যা দেওয়া হয়, এতে চলতে হিমশিম খেতে হয়।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সদ্য বিদায়ী সভাপতি ডা. মো. সাজিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা শেখার পাশাপাশি হাসপাতালে একজন অন ডিউটি ডক্টর হিসেবেও কাজ করি। দিন-রাত কাজ করতে হয়। ঈদ ও পূজাসহ অন্যান্য সরকারি উৎসবেও আমাদেরকে ছুটি দেওয়া হয় না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আমাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। সেইসাথে কোনো বোনাস দেওয়া হয় না।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ‘একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের প্রাণ বলা হয়। কারণ অন্যান্য ডাক্তারদের থেকে ইন্টার্নদের ডেউটি অনেক বেশি। মিড লেভেলের স্যার বা অধ্যাপক লেভেলের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন ইন্টার্নরা। একজন রোগী হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসার শুরু থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত যা যা করা উচিত, সবকিছু ইন্টার্নরাই করে থাকে।’

খরচ জোগাতে হাসপাতালে দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের যুক্ত হতে হয় টিউশনিসহ অন্যান্য কাজে। এতে বিঘ্নিত হয় ক্লান্তিহীন সেবা ও নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় কেউ কেউ পরিবর্তন করেন চিকিৎসার মতো মহৎ পেশা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ‘আমাদেরকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে মাস চলা প্রায় অসম্ভব এবং খুব কষ্ট হয়। ব্যয় মিটাতে আমাদেরকে মাঝে মাঝে টিউশনি ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া লাগে। সমন্বয় করে মাস পার করতে হয়।’

ডা. মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে বেশির ভাগ ইন্টার্ন চিকিৎসক হতাশায় ভোগেন। কারণ, ইন্টার্ন চলাকালীন ভাতা পায় ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত খরচ,পারিবারিক খরচসহ অন্যান্য কিছু সামাল দেওয়া লাগে। একজন শিক্ষার্থী যখন এমবিবিএস শেষ করেন, তখন পরিবারের প্রত্যাশা থাকে। এখন যে হারে সবকিছু দাম বাড়ছে, সেই অনুপাতে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মাঝে খেয়াল করলে দেখা যায়, চিকিৎসকদের মধ্যে ক্যাডার পরিবর্তন করার প্রবণতা বাড়ছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের যে পারিশ্রমিক বা ভাতা দেওয়া উচিত তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ডাক্তাররা ক্যাডার পরিবর্তন করছেন।

এ প্রসঙ্গে ডা. জেসিয়া জুই বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদেরকে যে ভাতা দেওয়া হয়, এটা সময়ের সাথে সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ১৫ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কাজ করার অনুপাতে আমাদের ভাতা বা বেতনটা বাড়ানো হোক।’শ্রম ও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যূনতম ত্রিশ হাজার টাকা ভাতা করার দাবি জানান নবীন এ চিকিৎসক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান শামীম বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, কর্মক্ষেত্রে যে আমাদের শ্রম বা ত্যাগ এর একটি সঠিক মূল্যায়ন চাই। সেইসাথে আমাদের ভাতাটা আরও বাড়ানো উচিত। কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করা হলে সময়ের সাথে উপযোগী হবে।’

ইন্টার্নদের ভাতা বাড়ানোর দাবি ন্যায্য উল্লেখ করে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘আপনারা জানেন আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরকে ছয় হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হতো। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে এই ভাতাটা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ১৫ হাজার টাকা করা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে কাজ করে।’ আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইন্টার্নদের ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। যাতে তারা ভালো মতো জীবন-যাপন করতে পার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি চালক রাখি। তাদের বেতন ২০ হাজার টাকা এবং দুপুরের খাবার দিতে হয়। সেখানে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের ভাতা ১৫ হাজার টাকা, এটা আসলে মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং তাদের ভাতা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক।’

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস’র (এফডিএসআর) মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ন্যূনতম একটি ভাতা নির্ধারণ করা উচিত। যেটা সবাই যুক্তিযুক্ত মনে করবে এবং তাদের যে দাবি সেটার সাথে সামঞ্জস্য করা উচিত। আমার মনে হয় তাদের ভাতা কমপক্ষে ২৫ বা ৩০ হাজার টাকা করা উচিত। এ ব্যাপারে এফডিএসআর তাদের পাশে আছে এবং প্রয়োজনে আমাদের সংগঠন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলবে।’

ভাতা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, সেটা হলো ইন্টার্নরাই তাদের সংগঠনের মাধ্যমে ভাতা বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করে। মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা ইন্টার্নদের ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তখন সেটা কর্তৃপক্ষ ভাতার বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে আলোচনা করে বৃদ্ধি করা হয়।’

ইন্টার্নদের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, চিকিৎসকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। যাতে চিকিৎসক পুরো সময়টাতে হাসপাতালে মনোযোগী হতে পারে। তাঁদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আসলে তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডক্টর যখন পাস করে যায়, তাঁর কাছ থেকে অনেকের চাহিদা থাকে। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় ভিন্ন কথা। তারপর থেকে ইন্টার্নদেরকে এভাবে ঠকানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
  3. বাড়ছে না ভাতা, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নাভিশ্বাস

বাড়ছে না ভাতা, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নাভিশ্বাস

দেশে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যসহ সকল কিছুর দাম। এতে জীবন নির্বাহের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে সমানুপাতিক হারে বাড়েনি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা। ফলে কষ্টে কাটছে নবীন চিকিৎসকদের জীবন।

সিনিয়র চিকিৎসকদের পরামর্শে দিন-রাত চিকিৎসা সেবা চালু রাখেন হাসপাতালের এসব প্রাণভোমরা। সরকারি ছুটিসহ অন্যান্য উৎসবেও দায়িত্ব পালন করেন তারা। তবে নিবেদিতপ্রাণ এসব স্বাস্থ্যকর্মীর কপালে জুটে না কোনো বোনাস।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. জেসিয়া জুই বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়া হাসপাতালের সেবার কথা চিন্তা করা যায় না। আমরা সপ্তাহে কমপক্ষে ৭০-৮০ ঘণ্টা কাজ করি। কখনও কখনও তারও বেশি কাজ করতে হয়। অনেক সময় একটানা ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টাও কাজ করি। আমাদেরকে সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই। মাসে একদিন ছুটি পাই কিনা তাও সন্দেহ। এভাবে কাজ করার পরও আমাদের ভাতা যা দেওয়া হয়, এতে চলতে হিমশিম খেতে হয়।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সদ্য বিদায়ী সভাপতি ডা. মো. সাজিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা শেখার পাশাপাশি হাসপাতালে একজন অন ডিউটি ডক্টর হিসেবেও কাজ করি। দিন-রাত কাজ করতে হয়। ঈদ ও পূজাসহ অন্যান্য সরকারি উৎসবেও আমাদেরকে ছুটি দেওয়া হয় না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আমাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। সেইসাথে কোনো বোনাস দেওয়া হয় না।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ‘একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের প্রাণ বলা হয়। কারণ অন্যান্য ডাক্তারদের থেকে ইন্টার্নদের ডেউটি অনেক বেশি। মিড লেভেলের স্যার বা অধ্যাপক লেভেলের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন ইন্টার্নরা। একজন রোগী হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসার শুরু থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত যা যা করা উচিত, সবকিছু ইন্টার্নরাই করে থাকে।’

খরচ জোগাতে হাসপাতালে দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের যুক্ত হতে হয় টিউশনিসহ অন্যান্য কাজে। এতে বিঘ্নিত হয় ক্লান্তিহীন সেবা ও নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় কেউ কেউ পরিবর্তন করেন চিকিৎসার মতো মহৎ পেশা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ‘আমাদেরকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে মাস চলা প্রায় অসম্ভব এবং খুব কষ্ট হয়। ব্যয় মিটাতে আমাদেরকে মাঝে মাঝে টিউশনি ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া লাগে। সমন্বয় করে মাস পার করতে হয়।’

ডা. মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে বেশির ভাগ ইন্টার্ন চিকিৎসক হতাশায় ভোগেন। কারণ, ইন্টার্ন চলাকালীন ভাতা পায় ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত খরচ,পারিবারিক খরচসহ অন্যান্য কিছু সামাল দেওয়া লাগে। একজন শিক্ষার্থী যখন এমবিবিএস শেষ করেন, তখন পরিবারের প্রত্যাশা থাকে। এখন যে হারে সবকিছু দাম বাড়ছে, সেই অনুপাতে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মাঝে খেয়াল করলে দেখা যায়, চিকিৎসকদের মধ্যে ক্যাডার পরিবর্তন করার প্রবণতা বাড়ছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের যে পারিশ্রমিক বা ভাতা দেওয়া উচিত তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ডাক্তাররা ক্যাডার পরিবর্তন করছেন।

এ প্রসঙ্গে ডা. জেসিয়া জুই বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদেরকে যে ভাতা দেওয়া হয়, এটা সময়ের সাথে সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ১৫ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কাজ করার অনুপাতে আমাদের ভাতা বা বেতনটা বাড়ানো হোক।’শ্রম ও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যূনতম ত্রিশ হাজার টাকা ভাতা করার দাবি জানান নবীন এ চিকিৎসক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান শামীম বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, কর্মক্ষেত্রে যে আমাদের শ্রম বা ত্যাগ এর একটি সঠিক মূল্যায়ন চাই। সেইসাথে আমাদের ভাতাটা আরও বাড়ানো উচিত। কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করা হলে সময়ের সাথে উপযোগী হবে।’

ইন্টার্নদের ভাতা বাড়ানোর দাবি ন্যায্য উল্লেখ করে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘আপনারা জানেন আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরকে ছয় হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হতো। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে এই ভাতাটা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ১৫ হাজার টাকা করা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে কাজ করে।’ আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইন্টার্নদের ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। যাতে তারা ভালো মতো জীবন-যাপন করতে পার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি চালক রাখি। তাদের বেতন ২০ হাজার টাকা এবং দুপুরের খাবার দিতে হয়। সেখানে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের ভাতা ১৫ হাজার টাকা, এটা আসলে মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং তাদের ভাতা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক।’

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস’র (এফডিএসআর) মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ন্যূনতম একটি ভাতা নির্ধারণ করা উচিত। যেটা সবাই যুক্তিযুক্ত মনে করবে এবং তাদের যে দাবি সেটার সাথে সামঞ্জস্য করা উচিত। আমার মনে হয় তাদের ভাতা কমপক্ষে ২৫ বা ৩০ হাজার টাকা করা উচিত। এ ব্যাপারে এফডিএসআর তাদের পাশে আছে এবং প্রয়োজনে আমাদের সংগঠন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলবে।’

ভাতা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, সেটা হলো ইন্টার্নরাই তাদের সংগঠনের মাধ্যমে ভাতা বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করে। মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা ইন্টার্নদের ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তখন সেটা কর্তৃপক্ষ ভাতার বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে আলোচনা করে বৃদ্ধি করা হয়।’

ইন্টার্নদের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, চিকিৎসকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। যাতে চিকিৎসক পুরো সময়টাতে হাসপাতালে মনোযোগী হতে পারে। তাঁদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আসলে তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডক্টর যখন পাস করে যায়, তাঁর কাছ থেকে অনেকের চাহিদা থাকে। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় ভিন্ন কথা। তারপর থেকে ইন্টার্নদেরকে এভাবে ঠকানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।’

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন