বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে জাহিদ হাসন জনি ডাক্তার হবে। আজ বাবার স্বপ্ন পূরন হতে চেলেছে। কিন্তু বেচে নেই জনির বাবা। স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয় প্রিয় বাবাকে।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পুরো পরিবার। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় জনিকে। অল্প বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। তবে সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে জনি।
রোববার (১২ মার্চ) প্রকাশিত ফলাফলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জনি।
রানীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে।ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল পৌরসভার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনি। তার এমন সফলতায় খুশি তার পরিবার ও স্থানীয়রা।
জাহিদ হাসান জনি বলেন, ছোটবেলায় বাবা বলতেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আজকে আমার বাবা বেঁচে নেই। তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
জনি আরো বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। আমার শুধু একটি বোন আছেন। কৃষিকাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ছিল, তবুও হাল ছাড়িনি। কারণ স্বপ্নটা যে আমার বাবার। এক ভাইয়ের মাধ্যমে অল্প টাকায় কোচিংয়ে ভর্তি হই। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেতাম। আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকতাম সবসময়। কষ্ট হলেও হার মানিনি। আজ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবল পথচলা শুরু। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি।
জনি আরও বলেন, যারা ছোটখাট বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়েন, তাদের বলব ভেঙে পড়বেন না। পরিশ্রম করলে আপনারাও ভালো জায়গায় পড়াশোনার করার সুযোগ পাবেন।
রানীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর জনি অনেক পরিশ্রম করেছে। আজ সে সফল হয়েছে। মাঝেমধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নিই। এছাড়া পরবর্তীতে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।