বাঙলা কলেজ প্রতিনিধিঃ বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় মহান ভাষা আন্দোলনের সৈনিকেরা জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘একটি বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয় করার অঙ্গিকার বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্যে ছিল। আজকের এই কর্মীসভার মধ্য দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাব- এই বাঙলা কলেজকে বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার। আমরা আহ্বান জানাব সঠিক পরিকল্পনা এবং রুপকল্প নিয়ে যেন এই বাঙলা কলেজকে একটি বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়।’
সোমবার (২ অক্টোবর) প্রায় তিন দশক পর রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি এ কথা বলেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘তিন চার দশক পরে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত। আমরা জানি যে ঢাকা শহরে রাজপথ নিরাপদ রাখার জন্য, সন্ত্রাসী খুনি, জঙ্গিবাদের তল্পিবাহকদের চিরতরে পরাজিত করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঢাকা শহরের তরুণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং টানা চতুর্থবারের মতো দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার জন্য বাঙলা কলেজ শাখার কমিটি গঠনের কোন বিকল্প নেই। আমরা গত দুই-তিনদিন আগে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীসভায় বলেছি- আগামী ১০০দিন বাংলার রাজপথ দখলে রাখবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমরা ঘোষণা দিয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলার পথকে আমরা মসৃণ রাখব। আগামি ১০০ দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে জাগ্রত অবস্থায় থাকবে। আগামি ১০০দিন দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসমাজ জাগ্রত থাকবে। আমরা জানি যেখানেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গতিশীল রয়েছে সেখানেই শিক্ষার্থীদের অধিকার নিরাপদ রয়েছে।’
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, ‘বাঙলা কলেজটি ৬২ বছরে পা দিয়েছে। গতকাল ১ অক্টোবর আপনার বাঙলা কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছেন। আপনাদের সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
সম্প্রতি বাঙলা কলেজে বিএনপি জামাতের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙলা কলেজের গেটে উর্দু কলেজ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিল তাদের উত্তরসুরিরাই বাঙলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেছে। কারণ তারা আমাদের বাংলা ভাষার চেতনায় বিশ্বাস করে না। এরা বাংলা ভাইয়ের চেতনায় বিশ্বাস করে।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, যাদেরকেই নেতৃত্ব দেয়া হয় তাদের নেতৃত্বেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এসময় অন্যন্যের মধ্যে আরও উপস্থি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ফুয়াদ হাসান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ সহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
কর্মীসভাকে ঘিরে দুপুর থেকেই বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশি নেতাকর্মীরা লাল, নীল, সবুজসহ বিভিন্ন রং বেরংয়ের গেঞ্জি এবং ক্যাপ পড়ে কলেজ মাঠে জড় হন। এছাড়া বাহারি রংয়ের শাড়িতে সাজেন ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা। কর্মীসভা ঘিরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বাংলাদেশ কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য, এবং বিতর্কমুক্ত কমিটির প্রত্যাশা জানান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে।
উল্লেখ্য, ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে জন্ম নেয়া বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার ৬২ বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু এত বছর পরে এসে আজও প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পূর্ণতা পায়নি । বাংলা ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিজড়িত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এই কলেজকে বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার দাবি জানিয়েছে কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ১ অক্টোবর রোববার সরকারি বাঙলা কলেজের ৬১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং ২ অক্টোবর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীসভায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে বাঙলা কলেজকে ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবি জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।