বাকৃবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) “বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষি ভাবনা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে ওই আলোচনা সভার আয়জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকাল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার মুখ্য আলোচক হিসেবে দেশের কৃষির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম। তিনি বলেন, ভাষার মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিসত্তার পরিচয় বিশেষভাবে পাওয়া যায়। বাঙ্গালীর সেই ভাষা আন্দোলনের কারিগরই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি আমাদের জাতিগতভাবে আত্মপ্রকাশের মহানায়ক। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কৃষি প্রধান দেশে কৃষির উন্নয়ন ছাড়া উপায় নাই। স্বাধীনতা পরবর্তী তাঁর সকল কার্যক্রমই ছিলো কৃষিকে ঘিরে। বাকৃবির মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেন। কৃষির উন্নয়নে যান্ত্রিকতা এবং আধুনিকায়ন যে একান্ত প্রয়োজন সেই ধারণার স্থপতিও বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের উন্নয়নে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০১ কোটি টাকা শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য রেখেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ কৃষি গবেষণার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যাত্রাও তাঁর হাত ধরেই।
দেশের ও কৃষির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, বাঙ্গালীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের তরে প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার শক্তি জুগিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু না থাকলে সোনার বাংলা বাঙালীর কেবল স্বপ্নই থেকে যেতো। দেশের কৃষির আজ যে সাফল্য তার সূচনা জাতির জনকের হাতেই। তিনি যে বলিষ্ঠ হাতে দেশের ওই দুর্বিষহ অবস্থার হাল ধরেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে দেশ গঠনের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য উপস্থিত শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তাদের সামনে তুলে ধরার অনুরোধ জানান তিনি।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী নেতা। তিনি কৃষির কল্যাণের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতেন। কৃষককে বাঁচাতে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে খাজনা ছাড়াই চাষাবাদের সুযোগ করে দেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে সার বিতরণ করেন। কৃষি বীমা ও কৃষি গবেষণা সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কৃষির উন্নয়নে তরুণদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেন। তিনি কৃষককে ভালোবাসতেন, কৃষকের শ্রমকে অনুধাবন করতেন। যেখানে সারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছে সেখানে তিনি কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে সচল অবস্থায় রেখেছেন। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, যুদ্ধপরবর্তী দেশের নাজুক অবস্থায় দেশের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু। তিনি প্রকৃতির সাথে ক্ষৃকের সংগ্রাম অনুধাবন করেছেন। দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে এই সত্য তিনি উদঘাটন করেন। কিভাবে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করে কৃষির উন্নয়ন করা যায় সেই পরিকল্পনা করেন তিনি। ওই ধারাবাহিকতায় তিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেন। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কিছুই বঙ্গবন্ধুর সাথে সম্পৃক্ত।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসলাম আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু। স্বাগত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।