বাকৃবি প্রতিনিধি: দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক) ও বাকৃবি প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘কৃষক দিবস’। কৃষকদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।
‘কৃষকবান্ধব প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হউক আমাদের অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে আগামী ৩০ জানুয়ারি বাকৃবি ক্যাম্পাসে এই দিবস পালিত হবে। অনুষ্ঠানে ৩০০ জন কৃষক-কৃষাণীর অংশগ্রহণে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে কৃষক র্যালি, আলোচনা সভা, কৃষকদের জন্য বাকৃবির খামার সমূহ পরিদর্শন ও কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক সবজি বাগান চাষে সেরা সবজি বাগান চাষকারী ৬ জন কৃষক-কৃষাণীকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র দিয়ে সম্মানিত করা হবে।
আগামী ৩০ জানুয়ারি সকালে কৃষক র্যালির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন শুরু হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল হক। এছাড়াও সকল অনুষদের ডিন, ডিজি , বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকবৃন্দ ,বাকৃবি রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ, বাউএক পরিচালক , প্রক্টরিয়াল বডি এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্যরাও উপস্থিত থাকবেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাউএকের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাছির উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাউএকের অতিরিক্ত পরিচালক আফরোজা বেগম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. সাইদুর রহমান ও ড. মো. এনামুল হক সরকার। এছাড়াও বাউএকের অনান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাউএকের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাছির উদ্দিন বলেন, কৃষকদেরকে উদ্ভাবিত কৃষকবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ও তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে আমরা কৃষক দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিষ্ঠার শুরুতে বাউএক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক নানা উন্নয়নে কাজ করলেও কৃষক দিবস নামক আলাদা করে কোন দিবস পালন করেনি। তাছাড়া জাতীয়ভাবে কৃষক দিবস আছে বলে আমার জানা নেই। ২০২৩ সালে বাকৃবির প্রশাসন প্রতিবছর জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবসটি পালনে আদেশনামা জারি করে, কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত তা আলোরমুখ দেখেনি। তাই বর্তমান বাকৃবি প্রশাসনের বিশেষ সহযোগিতায় বাউএক দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাউএক কৃষকদের কথা চিন্তা করে, তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের প্রতিযোগিতা, গবাদি পশু-পাখির টিকা প্রদান, মাঠ ফসলের প্রদর্শনী, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, পারিবারিক খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম, মাছ চাষ, মুরগি পালন কর্মসূচি, উন্নত ঘাস চাষ পদ্ধতিসহ কৃষকদের মাঝে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করি আমরা। নতুন নতুন প্রযুক্তি, ফসলের জাত কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদন ও তাদের লাভবান করে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছি আমরা।
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ এই চার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বাকৃবি প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সম্প্রসারণ কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে “এগ্রি ভার্সিটি এক্সটেনশন” প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ কাজ বাকৃবিতে পুরোদমে শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে প্রজেক্টের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক) প্রতিষ্ঠিত হয়।