যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে। তবে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ অনেক কিছুরই ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন হওয়ার পর যে ৩ বছর ৭ মাস সময়ে তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রুপরেখা তৈরি করে দেন।
শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের দিনব্যাপী কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এসব কথা বলেন। কর্মসূচির শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী যবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপরে তিনি শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক মদিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন হওয়ার পর যে ৩ বছর ৭ মাস সময় পেয়েছেন সে সময়ে তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রুপরেখা তৈরি করে দেন। সংবিধানে চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এর কোনটিই বিদেশ থেকে ধার করা নীতি ছিল না। সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, এই মাটি ও সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে তৈরি করা। বঙ্গবন্ধু পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে যে বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, তা যদি আজ বাস্তবায়ন হতো তাহলে আজ বাংলাদেশ তথা বিশ্বের চেহারা বদলে যেতো। কিন্তু পাকিস্থানি ও তাদের দোসররা তা মেনে নিতে পারেনি, যার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারকে হত্যা করা হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য যারা কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে, নিজে যারা আজ মানবাধিকারের কথা বলছে, যারা আজ গণতন্ত্রের কথা বলছে তারাই গণতন্ত্রের হত্যাকারী, তারাই মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লংঘনকারী, নিকৃষ্ট লঙ্ঘণকারী। আমরা কি তাদের মায়া কান্নায় ভুলব? না দেশ যে এগিয়ে চলেছে, তা অব্যাহত রাখব। আমরা কী একদিনে একশ সড়ক উদ্বোধন চাই? একদিনে একশ সেতু উদ্বোধন চাই? না কি পাঁচশ বোমা চাই? সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। আমি আশা করি, আমরা সকলেই ভাববো, চিন্তা করবো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেব। আমরা নিশ্চয় উন্নয়নের পথে হাঁটবো, মানবাধিকারের পথে হাঁটবো, স্বাধীনতার পক্ষে হাঁটবো এবং নিশ্চয় নৌকার পক্ষে রায় দেব। যে নৌকা আমাদের ভাষার অধিকার দিয়েছে, যে নৌকা আমাদের গণতন্ত্র, উন্নয়ন দিয়েছে। আমরা তাকে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আসুন একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মতো ব্যতীক্রম আয়োজন করায় যবিপ্রবিকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এরপর ডা. দীপু মনি যবিপ্রবির ডা. এম আর খান মেডিকেল সেন্টারে যান। তিনি সেখানে কয়েক জন রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্রও দেন।
সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে যবিপ্রবি পরিবার সব সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথেই থাকবে। এ ধরনের আয়োজন যবিপ্রবি অব্যাহত রাখবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে, বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দাও জানান তিনি। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান যবিপ্রবি উপাচার্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এইচ এম আহসান হাবীব, যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় একটি শিশুর আঁকা ছবি শিক্ষামন্ত্রীকে তুলে দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব। অনুষ্ঠানে যবিপ্রবির ডিন ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ড. মো. মুনিবুর রহমান, ড. মো. তানভীর ইসলাম, ড. মো. হাফিজ উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অমল কুমার বিশ্বাস, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, দপ্তর প্রধানসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান জাহিদ।
এই হেলথ ক্যাম্পে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ৬০ জন ডাক্তার প্রায় দুই হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেন। একই সঙ্গে কমিউনিটি সার্ভিসের অংশ হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের আশপাশের অসহায়, দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া ৫০০ জনকে বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, একমি ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এসিআই ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, বিলিভ পিটিই লিমিটেড, সিঙ্গাপুর, অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করে এবং বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড রক্তসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে সহযোগিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে তিনটি মডেল ফার্মেসী স্থাপনের মাধ্যমে রোগীদের ঔষধ সরবরাহ করে এবং নানা ধরনের পরামর্শ দেয়।