The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫

‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ নাম না হওয়ার দায় কার?

তৌফিকুল ইসলাম আশিক: গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে ১৩ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পাশ হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম হয়েছে ‘মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি নতুন নাম হবে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’। কেনো হলো না? কি সমস্যা!!

মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শুরু থেকেই, প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া প্রতিটি স্টুডেন্ট এর মনের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ছিলো ইশ ইউনিভার্সিটির নাম যদি ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ হতো! বাংলাদেশের একমাত্র মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম এটা চাওয়াই স্বাভাবিক। ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পরেই সবাই এই নাম পরিবর্তনের দাবি জানায়। মূল ফটকে বঙ্গবন্ধুর নাম অপসারণ করে শিক্ষার্থীরাই।

মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয় ৩ সেপ্টেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ১৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। যা ছিলো মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্বাধীনতার বীজ রোপণ। সেখানে স্পষ্ট দাবি ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নি। উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কমোডর মনির উদ্দিন মল্লিক, অন্যান্যদের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন এবং নাম পরিবর্তনসহ সবগুলো দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ভদ্র তাই পরদিন থেকেই আবার সকল শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসে সবাই। এ সময় আলোচনা হয় ___বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি করে, আলোচনা করে, সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্ত কিছুই হয় নি!

দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখে____শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা একাধিকবার রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করলে নানান টালবাহানা শুরু হয়। যার মধ্যে অন্যতম নাম পরিবর্তন। এত এত শিক্ষার্থীদের দাবি, ৩ সেপ্টেম্বর সবার সামনেই ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ নাম প্রস্তাব করার পরেও রেজিস্ট্রার কমোডর মনির উদ্দিন মল্লিক তার নিজের পছন্দ___ ‘মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ এ অটল থাকে। আমাদেরকে বলেন আবারো চিন্তা করতে। নানা যুক্তি দেখান। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ আপডেট করতে বলা হলেও করে নি (যেটি ৫ আগষ্টের পর ‘মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ করা হয়েছিলো)। উপরন্তু বাসের নতুন পেইন্টে নাম হয়___’মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’। বিভিন্ন নথিপত্রে শুরু হয়েছিল মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ লেখা। পরবর্তীতে কিছু চাপের ফলে লেখা শুরু হয় বিএসএমআর মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। এমন, তার একক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তেই চলছিলো সব কিছু। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। যার ফলাফল এই ‘মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’।

শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সরকার পর্যায়ে নাম পরিবর্তনের জন্য চিঠি পাঠানো। যা পাঠানো হয় নি। এক্সকিউজ দেয়া হয় ‘ইউজিসি থেকে মানা করা হয়েছে’। সরকার এই দায়িত্ব নিয়েছে। যতদূর জানি আগষ্ট সেপ্টেম্বরেই শেখ পরিবারের নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন কমিটি হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে আন্দোলন, এতবার তার কাছে যাওয়া, কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করেননি রেজিস্ট্রার। পাঠানো হয় নি নাম পরিবর্তনের চিঠি। এর মাঝে শিক্ষার্থীদের সাথে কয়েকবার অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেন রেজিস্ট্রার। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের দাবি পূরণের জন্য সংবিধানে স্বাক্ষর করে এসেছি? আমি কি তোমাদের চাকর? আমার আর কোনো কাজ নেই। তোমরা বললেই আর হয়ে যাবে? এমন আচরণ করা শুরু করেন। জুলাই আগষ্ট অভ্যুত্থানের স্মরণে করা অনুষ্ঠান তার পরিকল্পনাহীনতা এবং অযোগ্যতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ব্যক্তিগতভাবে এইসব বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি আমার আচরণ ছাত্রলীগের আচরণের সাথেও তুলনা করেছেন। যৌক্তিক দাবি আদায়ে কথা বলা কি ছাত্রলীগের আচরণ?

প্রায় চার মাস হয়ে গেলেও কোনো বিষয়ে কোনো সমাধান আসছিলো না। বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি করার কথা থাকলেও হয় নি শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমিটিও। শিক্ষার্থীদের ফি কমানোর কমটিতে রাখা হয় দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। ২-৩ মাসেও সেমিস্টার ফি কমানোর কমিটি দিতে পারে নি প্রতিবেদন। এর মাঝে কাহিনীর শেষ নেই। অনেক অনেক প্রতিবন্ধকতা। সব হয়____দাবি আদায়ে নেই কোনো জোড়ালো কার্য্যক্রম। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে উপাচার্য মহোদয়ের সাথে দেখা করতে গেলে সেখানেও এসে বাধা দেয় এই রেজিস্ট্রার কমোডর মনির উদ্দিন মল্লিক। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় এবং সেদিন থেকেই ওনার সাথে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উপাচার্য মহোদয়কে সব বিষয় জানানো হয়। তিনি আশ্বস্ত করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রারের অসহযোগিতায় কোনো কিছুই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। আবারো আন্দোলন ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪।

এবারের আন্দোলন আরো জোড়ালো হয়। অবরোধ করা হয় মিরপুরের রাস্তা। অবশেষে উপাচার্য মহোদয় সবার সামনে এসে কথা বলেন, তিনি জানান অনেক বিষয় তাকে জানানো হয় নি। শিক্ষার্থীদের মন্তব্য_____এই না জানানোর দায়ভার রেজিস্ট্রারের। নিজের ইচ্ছে মতো অনেক বিষয় জানাননি উপাচার্য মহোদয়কে। উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের সাথে বসেন। বিভিন্ন বিষয়ে ইমিডিয়েট একশন নেন। ১৫ তারিখ আন্দোলন, ১৭ তারিখ উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে চিঠি যায় ইউজিসিতে। এর আগে কোনো ধরনের চিঠি যায় নি। বিষয়গুলো পৌঁছায়নি জায়গা মতো।

নাম পরিবর্তনের এমন সিদ্ধান্ত শোনার সাথে সাথেই উপাচার্য মহোদয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে জোড়ালোভাবে শিক্ষার্থীদের প্রাণের চাওয়া ‘বাংলদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ ব্যাপারটা জানিয়েছেন। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক অতিরিক্ত পরিচালককে জানানো হয়েছে। সব মিলে উপাচার্য মহোদয়ের উপর আস্থা রেখেছে শিক্ষার্থীরা। আশা করছি প্রজ্ঞাপন ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ হয়েই আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় যথেষ্ট আন্তরিক। তিনি চেষ্টা করছেন সব যৌক্তিক দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য। কিন্তু উপাচার্য মহোদয়কে সঠিকভাবে সাহায্য করতে ব্যার্থ, আমাদের সবার প্রিয় রেজিস্ট্রার। আমরা মানি আপনি দেশের গৌরব নৌবাহিনীর একজন চৌকস কর্মকর্তা। কিন্তু প্রিয় রেজিস্ট্রার স্যার আপনি বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর জন্য যোগ্য না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনি তো এই জায়গাগুলোর মানুষ না। আবার এটা নৌঘাঁটিও না। যার স্থান যেখানে তাকে সেখানেই রাখা উচিত। একটি ভুলের কারণে এমন মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে।

এখন আসি খুবই এল্যার্মিং একটা বিষয়ে, গতকাল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ -এর ভেরিফায়েড ফেসবুক এ পোস্ট করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দেখা যায় কি? মেরিনেইম বিশ্ববিদ্যালয়। হতে পারে স্পেলিং মিসটেক। কিন্ত এই রেফারেন্স প্রথম সারির মিডিয়াগুলো রিপোর্ট করেছে। কারেকশন করে নি। কারন তারা জানে না ‘মেরিটাইম’ শব্দটা। আন্দোলনের দিন পুলিশ এসে বলে আপনি এই কলেজের স্টুডেন্ট? লজ্জা!! ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ‘মেরিটাইম’ শব্দটা এখনো পরিচিত করাতে পারেনি। সবাইকে জানাতে পারে নি এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়। বোঝাতে পারেনি এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটাই আমাদের আক্ষেপ।

কিন্তু কেনো এমনটা হলো? এর পেছনে দায়ী সিস্টেম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, ডিন, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কিছু ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধান থেকে শুরু করে আরো গুরুত্বপুর্ন স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তারা। নির্দ্ধিধায় বলতে পারি তারা যোগ্য কর্মকর্তা। দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষাই তাদের দায়িত্ব। স্যালুট তাদের। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য আসেন মাত্র ৬ মাস কিংবা ১ বছরের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝে ওঠার আগেই, বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসা শুরু হতে হতেই তাদের আবার ফিরিয়ে নেয়া হয় নৌবাহিনীতে। কাজ শুরু করার আগেই শেষ। নৌবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তাদের কাজ শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যায়। অনেকেই তোড়জোড় শুরু করেন এখানে থেকে চলে যাওয়ার জন্য। যাই হোক এই সমস্যা সমাধান করা জরুরি। পাশপাশি যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন, অনেকেই মনের বিরুদ্ধে আসছেন। অনেকের সাথেই কথা হয়েছে তারা বলেন, তারা এখানের জন্য না। তারা জোর করেও আসেন নি। পাঠানো হয়েছে তাই।

আচ্ছা কেনো এমন? ব্লেন্ডেড সিস্টেম কি করা যায় না? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপ-উপাচার্য সিভিল থেকে দেয়া যায় না? ডিনগণ যেহেতু একাডেমিক বিষয় দেখেন তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চালিয়ে আসা অভিজ্ঞ মানুষরা হতে পারেন না? একটু ভাবতে হবে। শুধু ক্ষমতা ধরে রাখা না, বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করবো।

ঐযে মেরিনেইম লিখেছে, এক নামে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিকে সবাই চিনবে। সেই আইডিয়া আমাদের স্টুডেন্টদের কাছে আছে। এক নামে মেরিটাইম কে চিনবে সেই জন্য কাজ করতে হবে। ২০ লাখ টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking কিভাবে হবে সেই প্রজেক্ট না করে, ২ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচারনায় ব্যয় করা অধিক কার্যকরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking এমনিতেই হবে যদি একাডেমিশিয়ানদের প্রাধান্য দেয়া হয়। শিক্ষকরা তাদের যোগ্য স্থান ও মর্যাদা পায়। তাদের গুরুত্ব দেয়া হয়। আর সকল ধরনের নিয়োগ বৈধভাবে হয়। আমাদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘মেরিটাইম’ শব্দটাকে চেনাতে হবে।

সর্বোপরি সবাইকে অনুরোধ করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য এক থাকতে। অনেকে অনেকভাবে ডিভাইড করার চেষ্টা করছে। সাময়িক ক্ষতির কথা না ভেবে সামগ্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষতির সম্মুখীন থেকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব। এই বিশ্ববিদ্যালয়টা আমার, আমাদের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের টাইটেল আমার ক্যারি করবো। যারা এখানে কাজ করছেন তাদের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি আমরা বিলং করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো আমাকে বা আমাদেকে শত্রু ভাববেন না। আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। আপনারা আমাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসি। বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিকে এক নামে চিনুক সবাই। হোক একটা ব্র্যান্ড।

লেখক: শিক্ষার্থী, পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.