বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বাইশ বিভাগে প্রায় ৮,০০০ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী-ই রংপুর বিভাগের বাহিরে থেকে আসা। এসব শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উপর নির্ভরশীল।
তবে প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান এখনো সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক স্তরেই সীমাবদ্ধ বেরোবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র ৪ জন, নার্স মাত্র ১ জন। বিপরীতে সেবাগ্রহীতা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৯,০০০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ( ডাব্লিউএইচও ) এর মতে প্রতি ১,০০০ জনসংখ্যার জন্য ১ জন চিকিৎসক থাকা দরকার এবং প্রতি ১ জন ডাক্তারের জন্য ৩ জন নার্স থাকা আবশ্যক। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ১ জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করে ২২৫০ জনের।
একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে শিক্ষার্থীরা রাইজিং ক্যাম্পাসকে জানায়, রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ক্লিনিকে তাদেরকে যেতে হচ্ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এছাড়াও সুইপার সংকটের কারণেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবজর্না। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের।
এছাড়াও তাদের অভিযোগ শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনকি সুচিকিৎসার জন্য নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নেই কোনো কনসালটেন্ট, নিউরোলজিস্ট যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা সেবার জন্য খুবই অপ্রীতিকর। এমনকি কোনো শিক্ষার্থী জরুরি অবস্থায় থাকলেও শয্যা সুবিধা না থাকায় তাকে নিতে হচ্ছে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রংপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যা সুচিকিৎসার পথে প্রধান অন্তরায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি শুক্রবার ও শনিবার মেডিকেল সেন্টার চালু রাখার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু অসুস্থতা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আসে না সেহেতু তাদের এই দাবি গ্রহন করা অস্বাভাবিক কিছু না।
তাছাড়াও শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক সংকট নির্মূলের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। বিশেষ করে বিভিন্ন বিষয়ে স্পেশালিস্ট চিকিৎসক নিয়োগের জন্য গুরুত্বারোপ করেন। অধিকন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুফলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মেডিকেল সেন্টারে যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণের জন্য জোর চাহিদা জানান।
শিক্ষার্থীরা অনেক সময় খেলতে গিয়ে হাড়ে ব্যথা পাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, যকৃৎ, ফুসফুস এবং হৃদপিন্ড ইত্যাদি সমস্যা শনাক্তকরণের জন্য এক্স-রে, সিটি স্কান, এমআরআই, এনজিওগ্রাফি, এন্ডোসকপি, এসিজি ও ইটিটি সহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য মেডিকেল সেন্টারের নিকট প্রত্যাশা করেন।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নতকরণের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তর থেকে সেকেন্ডারি স্তরে স্থানান্তরের জন্য বেরোবি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
ডেপুটি চিপ মেডিকেল অফিসার ( ডেন্টাল সার্জন ) ডাঃ এ. এম. এম শাহরিয়ার রাইজিং ক্যাম্পাসকে জানান, বেরোবির মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে প্রাথমিক স্তরে; সে হিসেবে আমরা যে সেবা দিতে পারি তাতে সন্তুষ্ট। কিন্তু যেহেতু প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে গেছে সেহেতু বর্তমানে সেকেন্ডারি স্তরের চিকিৎসা প্রদান করা দরকার। কিন্তু ৯,০০০ জন সেবাগ্রহীতার জন্য চিকিৎসক মাত্র ৪ জন যা সুচিকিৎসা প্রদানের পথে প্রধান অন্তরায়। তাছাড়া ঢাবি, জাবি, রাবি ইত্যাদি বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে সেকেন্ডারি স্তরের চিকিৎসা প্রদান করতে হলে মেডিকেল সেন্টারের জন্য আলাদা ভবনের পাশাপাশি সেকেন্ডারি স্তরের চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার ও বেরোবি প্রশাসনের কাছে আমার প্রত্যাশা মেডিকেল সেন্টারের যাবতীয় সংকট দূরীকরনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করবে।
মেডিকেল সেন্টার চালুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হারুন- অর- রশীদ রাইজিং ক্যাম্পাসকে জানান, যত দ্রুত সম্ভব আমরা মেডিকেল সেন্টার প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করব। চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে আমরা বাহিরে থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক হায়ার করে চিকিৎসক সংকট নিরসন করবো। তাছাড়া মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা পদ্ধতি খুব শীঘ্রই সেকেন্ডারি স্তরের উত্তীর্ণ করা হবে। সেকেন্ডারি স্তরের চিকিৎসা মানের জন্য যেসব অবকাঠামো দরকার তার ব্যবস্থা করবো।