মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবিঃ জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুপ্রবি) নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখার উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগমের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর-এর অনুমোদনক্রমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৭ এর ধারা ১০ (১) অনুযায়ী ড. মো. কামরুল আলম খান, অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ এবং পরিচালক, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-কে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর-এর ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ করা হলো।
শর্তে বলা হয়েছে, উপাচার্য হিসেবে তাঁর নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ হতে চার বছর হবে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তিনি নিয়মিত চাকরির বয়সপূর্তিতে মূল পদে প্রত্যাবর্তনপূর্বক অবসরগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন শেষে উক্ত মেয়াদের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করবেন। তিনি তাঁর বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতা প্রাপ্য হবেন এবং বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উপাচার্য সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান পাথরকুচি পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিস্ময়কর পদ্ধতির আবিষ্কারক করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পাথরকুচি পাতার রস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে তিনি বৈদ্যুতিক বাতি, টেবিল ফ্যান, এনার্জি বাল্ব, কম্পিউটার, সাদাকালো টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালিয়ে সফল হয়েছেন।
পাথরকুচি পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এইচএসবিসি উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০০৯-১০-এর বাংলাদেশ পর্বে রৌপ্যপদক অর্জন করেন। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৌলিক গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক-শামসুন গবেষণা পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১২ সালে আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এনভায়রনমেন্ট সাসটেইনেবিলিটির ওপর বেস্ট ইনোভেশনের জন্য টোমবার্গ পুরস্কার অর্জন করেন।
এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের র্যাংকিং তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মধ্যে প্রথম ও দেশের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ই নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর তার উপাচার্যের মেয়াদকাল শেষ হয়। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে অবস্থান কর্মসূচি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অচলাবস্থায় রেখেই সাবেক উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপ-উপাচার্য এর দুটি পদ খালি থাকলেও সেগুলো খালি রয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ২১ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিকবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নিরঞ্জন কুমার সানাকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি যোগদান করেননি।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ গ্রামে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ। সরকার ২০১৭ সালের ২৫মে এটিকে একটি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের নীতিগত সম্মতি দেয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে বিল আকারে জাতীয় সংসদে পাস হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে। ৫০০ জন শিক্ষার্থীর ৫০০ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু নঈম শেখ।
এক অভিনন্দন বার্তায় সুবিপ্রবি উপাচার্য বলেন “রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আপনাকে নিয়োগ প্রদান করায় আমার ব্যক্তিগত এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন প্রকাশ করছি। আপনার দৃঢ় নেতৃত্ব এবং আন্তরিকতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।”