বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার সহযোগীকে মারধরের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় শিক্ষার্থী ছাড়াও আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার দায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না জানিয়ে বলেছে, অন্যায় কোনো কাজে জড়িত হলে তার দায় শিক্ষার্থীর নিজেকেই নিতে হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মিরাজ বলেন, ১০ জানুয়ারি মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছি। এছাড়া পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার প্রধান শিকার মাসুম হাসপাতালে ভর্তি। তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন হুমাহুম রেস্টুরেন্টে দুপুর আড়াইটার দিকে খাবারের বিল পরিশোধ করছিলেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির। সঙ্গে তার মোটরসাইকেলচালক মাসুম ছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ২৫-৩০ জনের একটি দল রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে কাউন্সিলরের মোটরসাইকেলচালক মাসুমকে মারধর শুরু করে। হামলাকারীরা স্প্রাইট-পেপসির কাচের বোতল দিয়ে মাসুমের মাথায় ও শরীরে আঘাত করে। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে কাউন্সিলর হুমায়ূনকে ঘুসি ও লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওইদিন হামলার আগে ভোরে কালোজিরা এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলরের সঙ্গে বিবাদে জড়ান। সূত্রগুলো বলছে, একটি ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে রাখেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির। সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গিয়ে অবস্থান নেন এবং কাউন্সিলরের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। এক পর্যায়ে কাউন্সিলরের মোটরসাইকেলচালক মাসুম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীদের একজনকে ঘুসি দেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলে এসে পরিকল্পিতভাবে রূপাতলীতে অবস্থান নেন। রূপাতলীর ওই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে আসবেন কাউন্সিলর এই তথ্যও সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। তথ্য অনুসারে কাউন্সিলর তার সহযোগীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এলে হামলা চালায় তারা। মারধরে আহত মাসুম বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাসুম মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির বলেন, নির্বাচনের দিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল দক্ষিণ জাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন। ভোটাররা যেন নৌকায় ভোট না দিয়ে ট্রাক প্রতীকে ভোট দেয় সেভাবে মানুষজনকে প্রভাবিত করছিলেন তারা। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি, তোমরা এখানকার ভোটার না, তোমরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাও। এ সময় আমার মোটরসাইকেলচালক মাসুম শিক্ষার্থীদের বলেছিল, তোমরা কি কেন্দ্র ছাড়বা নাকি ছাড়তে বাধ্য করব। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে রূপাতলীতে আমাদের পেয়ে মারধর করে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম বলেন, রূপাতলীর একটি রেস্টুরেন্টে মারামারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শুনেছি। ক্যাম্পাসে বা বাইরে কোনো শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বদা পাশে পাবে। কিন্তু ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে অন্যায় কোনো কাজে জড়িত হলে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না। এই দায় শিক্ষার্থীর নিজেকেই নিতে হবে। অন্যায় করলে আইন আইনের গতিতে চলবে। মামলা হয়েছে, এখন প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।
এজাহার অনুযায়ী মামলার আসামিরা হলেন-হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ইব্রাহিম খান শাওন, শরিফুল ইসলাম, একে আরাফাত। বাংলা বিভাগের রাকিবুল হাসান, তুষার রহমান, রাকিব হোসেন, পলাশ দাস। ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, সাইমুন হোসন, শাহারিয়ার শাকিল। ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের ফারদিন খান। রসায়ন বিভাগের নাহিদ রাফিন ও নজরুল রিফাত। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফেরদৌস, ২৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হান্নান বাপ্পী, মামুন ফরাজী, শরিফুল ইসলাম। মামলায় আরও ১০ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন।