The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বন্যা কবলিতদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তায় কাজ করছে অক্সফ্যাম

প্রতিবেশী দেশ ভারতের উজান থেকে আসা পানির ঢল, ভারী বর্ষণ আর উপচে পড়া নদীর পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশের ১২টি জেলা। বিপর্যস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন, এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আটকে পড়া বন্যাকবলিত দুর্গতদের মাঝে জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফ্যাম।

স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যায় সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, এই সংকটটের সময় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে অক্সফ্যাম দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে। প্রদান করছে জরুরি মানবিক সহায়তা। বন্যার পানিতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার সীমিত সুযোগের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বাংলাদেশের এই বন্যা পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ যতগুলো মারাত্বক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম; যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও বন্যাকবলিতদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানে জরুরিভিত্তিতে আমরা বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে পাশে চাই।’

আশীষ দামলে আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে অক্সফ্যাম মাঠ পর্যায়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা ব্যক্তি, সংগঠন এবং সম্প্রদায়; সকল পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

আকস্মিক বন্যার শুরু থেকেই অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ পার্টনারদের সাথে নিয়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে এবং জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অক্সফ্যাম এই সহায়তা কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ), নারী ও শিশুর সুরক্ষা, আশ্রয় প্রদান এবং জীবিকা সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলো পূরণ করা হবে। এগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, শিশুখাদ্য, রান্না করা খাবার এবং হাইজিন কিট বিরতণ উল্লেখযোগ্য।

এই বন্যায় ১২ জেলার মোট দুই হাজার মোবাইল টাওয়ার ধসে গেছে এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্নকভাবে ব্যহত হচ্ছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, পানিবন্দী প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ, বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে ১১ লাখ মানুষ। এছাড়াও ৩.৫ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় হুমকি হতে পারে।

বন্যাকবলিত ফেনীর বাসিন্দা নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের ঘর, যেখানে আমরা এতোদিন আশ্রয় নিয়েছি, বন্যায় তা পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। আমাদের খাওয়ার জন্য খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, সাহায্য চাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমরা প্রতিটি দিন সংগ্রাম করে টিকে আছি আর দোয়া করছি কোনো সাহায্য আসবে এবং আমাদেরকে এই দুঃস্বপ্ন থেকে উদ্ধার করবে।’

অক্সফ্যাম জরুরিভাবে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে ৩ মিলিয়ন ইউরো তহবিল সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, যা ১ লাখ ৭০ হাজার দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের জন্য ৫ মিলিয়ন ইউরো প্রয়োজন, যা ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মৌলভীবাজারের আরও ৩ লাখ মানুষের স্যানিটেশন, অবকাঠামো ও জীবিকা পুনর্গঠনে ব্যয় হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.