আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার পাওয়া নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে এক ধরনের তোলপাড় চলছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে মিথ্যা বলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ নিয়ে স্থানীয় সময় শনিবার (৪ জানুয়ারি) টিউলিপকে তার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের দাবি করেছেন টোরি এমপিরা।
রোববার টিউলিপ সিদ্দিককে একাধিকবার প্রশ্ন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। টিউলিপকে প্রশ্ন করা হয় যে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের ফ্ল্যাটটি তিনি তার স্বৈরশাসক খালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে পেয়েছিলেন কি না।
এর আগে টিউলিপ জানান, উপহার হিসেবে তিনি এই ফ্ল্যাট পাননি। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, তার বাবা-মা তাকে এই ফ্ল্যাটটি কিনে দিয়েছিলেন। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে লেবার পার্টির সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে টিউলিপকে ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন আবাসন খাতের এক ডেভেলপার।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, গতরাতে টোরি দলের এপমিরা টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের দাবি করেছেন।
টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তিনি তা ব্যাখ্যা না করলে মন্ত্রী হিসেবে তার এই অবস্থান অযোগ্য।
টোরি দলের আরেক এমপি বেন ওবিস-জেক্টিন বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে নতুন এই তথ্য উদ্বেগজনক।
লেবার পার্টির সূত্র গত রাতে জানায়, ২০২২ সালে যখন প্রথম অনুসন্ধান করা হয় তখন টিউলিপ সিদ্দিককে তার পরিবার জানায় যে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহে তার পরিবারের ‘দাবি’ পরিবর্তন হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এমন এক ব্যক্তি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, মোতালিফ (আবাসন ব্যবসায়ী) ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে উপহার দিয়েছেন ‘কৃতজ্ঞতার নিদর্শন’ হিসেবে, কারণ তিনি নিজে যখন দুর্দশার মধ্যে ছিলেন, টিউলিপের বাবা-মা তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছিলেন।
শুক্রবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে প্রকাশের টিউলিপ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে যে, কীভাবে তিনি এই সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছেন সেই সম্পর্কে টিউলিপের আগের বোঝার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। এই ভুল বুঝতে পারার পর দ্রুত টিউলিপ সিদ্দিক সাংবাদিকদের এই বিষয়ে অবহিত করেন- যারা এই বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে তৃতীয় তলার এই ফ্ল্যাটের মালিক হন টিউলিপ। তখন তিনি সবেমাত্র লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেন। সেই সময় তার জ্ঞাত আয় ছিল না।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, তারা প্রমাণ করেছে যে পূর্বে এই ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন আব্দুল মোতালিফ। ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। তিনি ২০০১ সালে এই ফ্ল্যাট ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কিনেছিলেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে টিউলিপকে ডেইলি মেইলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় তার এই ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে পাওয়া কিনা। এর জবাবে লেবার পার্টির মেইল থেকে বলা হয়, ২০ বছর আগে টিউলিপের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে, তারা তাদের পরিবারের বাড়ি বিক্রি করে এবং সেই অর্থ দিয়ে কিংস ক্রস এলাকায় ফ্ল্যাটটি কিনেছিল।
এরপর গত বছরের জুলাইতে টিউলিপ সিদ্দিক এবং লেবার পার্টির কাছে ডেইলি মেইল আবার প্রশ্ন করে। তবে এর জবাবে টিউলিপ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন টিউলিপ বলে ডেইলি মেইল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে।