ভারতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আজ রোববার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। আজ সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন। ইউরোপের প্রভাবশালী এই নেতাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ঢাকা। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।
জানা গেছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনা তার দিল্লি সফর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করেছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর শেষে একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই সফরের আয়োজন কিছুটা তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে। ফলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং এয়ারবাস ক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য আগে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তবে ওই চুক্তি আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় অনেক কঠিন। সরকার তাই স্যাটেলাইট চুক্তিটি ফ্রান্সের সঙ্গে করার সিদ্ধান্ত নেয়। অপরদিকে অনেকটা দ্রুতগতিতে এয়ারবাস ক্রয়ের সিদ্ধান্তে উপনীত হয় বাংলাদেশ।
সোমবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তারপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। দুই নেতা চুক্তি অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে সোমবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে থাকবেন দেশটির ইউরোপ এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা। সফর শেষে বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
ফ্রান্সের সহায়তায় এবার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তার নাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২। এটি একটি ‘আর্থ অবজারভেটরি’ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে পৃথিবী তথা বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা হচ্ছে। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে তিনি আসতে পারেননি। এখন ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে আসছেন।’
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরকালে বড় কোনো চুক্তি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ফ্রান্সের সহায়তার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আর কিছুই বলেননি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান ড. শাহজাহান মাহমুদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ হলো একটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে পৃথিবীটা দেখা যাবে। ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি পৃথিবীর ছবি তুলে বাংলাদেশে পাঠাবে। বাংলাদেশে কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে করণীয় অনেক কিছু জানা যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হওয়ায় আমাদের সমুদ্র অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্র অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূউপরিস্থ যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১৯ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসাবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।