এবার ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অর্জিত সকল সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেললেন ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র আব্দুস সালাম। বেধে দেওয়া সরকারি চাকরির বয়স সীমা পার হয়েছে আগেই। সোনার হরীণ সরকারি চাকরির জন্য অসংখ্য আবেদন করেও পাননি চাকরি। তাই তার অর্জিত সকল সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) রাতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌরশহরে কুটুম বাড়ি নামের এক রেস্টুরেন্টের ভেতর সালাম তাঁর সার্টিফিকেটগুলো আগুনে পোড়ান। পরে সেই সার্টিফিকেট পোড়ানোর ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন। মুহূর্তেই তাঁর পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। আব্দুস সালাম মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দেওথান গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে।
তবে ঠিক কি কারণে এখন তিনি তার সব সার্টিফিকেট পোড়ালেন সে বিষয়েও কথা বলেছেন ঢাকা কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থী। তবে এর আগে সরকারি ইডেন কলেজের এক ছাত্রী তাঁর সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার পর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে তাকে চাকরি প্রদান করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। যা নিয়ে পেক্ষে বিপক্ষে দেশের সোসাল মিডিয়ায় এখনো আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: লাইভে সার্টিফিকেট পোড়ানো তরুণীকে চাকরি দিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুস সালামের জানান, ২০০৬ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। এরপরে ঢাকা কলেজে, ঢাকা কলেজ থেকে তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সালামের সাবজেক্ট ছিল দর্শন শাস্ত্র।
পড়াশোনা শেষে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য একাধিক আবেদন করেও চাকরি মেলেনি। চাকরির বয়স শেষে হতাশ হয়ে নিজের শহরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। শহরের স্টেশন রোডে ‘কুটুম বাড়ি’ নামে তার একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে তার। চাকরি না পেয়ে তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
সালাম বলেন, ‘ ঢাকা কলেজের মত স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। রেজাল্টও তুলনামূলক ভাবে অন্যদের থেকে ভালো। কিন্তু অসংখ্য আবেদন করেও চাকরি হয়নি। অথচ অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও লবিং-ঘুষ এর মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার বয়স ৩৬ বছর। সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর আবেদনের সময় নেই। অকেজো এই সার্টিফিকেট তাই পুড়িয়ে দিলাম। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাই। বয়সসীমা সবার জন্য না বাড়িয়ে সার্টিফিকেট পোড়ানোর কারণে ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তাকে চাকরি দেওয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে সালাম বলেন, ‘এটা মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। একজনের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। সবার জন্য চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো দরকার। তাহলে সবাই এই সুযোগটা পাবে।’
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘এভাবে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পড়াশোনা আসলে চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ জ্ঞান জীবনের সবক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। সবার তো চাকরি হয় না। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাহলে এই হতাশাগুলো আর থাকবে না।’