দিনের অন্তত একবার হলেও আমরা ফেসবুকে ঢু মারি। অন্যের ছবিতে লাইক-কমেন্ট করি, নিজের টাইমলাইনে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করি। বন্ধুদের সাথে সেসেঞ্জারে তুমুল আড্ডা দেই। এসবের পাশাপাশি ২.৩২ বিলিয়ন ইউজার সমৃদ্ধ ফেসবুকে কিন্তু চাইলেই গড়ে তোলা যায় ছোটখাটো একটা অনলাইন স্টার্টআপ।
বিভিন্ন ফ্যানপেজ তৈরি করা, ভিডিও বানানো, ফেসবুক গেম ডেভেলপ করা, অনলাইন শপের মত হাজারো পদ্ধতির মাধ্যমেই ফেসবুক হয়ে উঠতে পারে আপনার আয়ের উৎস। যেকেউ চাইলে নিজে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেকানে ভিডিও আপলোড করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন।
কম্পিউটারে প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ খোলার নিয়ম
প্রথমে আপনাকে যেকোনো একটি ব্রাউজারে গিয়ে ফেসবুক লগইন করতে হবে। এরপর আপনি নিচের প্রক্রিয়া অনুসারে একটি অনুসারে একটি প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ খুলতে পারবো।
১. প্রথমে আপনাকে ফেসবুকের পেজ অপশনে যেতে হবে। চাইলে আপনাকে এখানে ক্লিক করে সরাসির নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন।
২. এবার আপনি যে নতুন উইন্ডো দেখতে পাবেন সেখানে তিনি অপশন আসবে। সেগুলো হলো-
* ফেসবুক পেজের নাম: আপনার ফেসবুক পেজের নাম কোন বড় ব্রান্ড, সেলিব্রেটি, সরকারি সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম ব্যবহার করবেন না। এতে করে পেজ যেকোনো সময় ফেসবুক ডিলিট করে দিতে পারে। তাছাড়া ৪ হাজারের বেশি লাইক পড়লে নামও চেঞ্জ করতে দিতে না। ফলে ফেক নেম ব্যবহার করে যারা লাইক পাওয়ার চিন্তা করেন সেটা বাদ দিতে হবে।
* ফেসবুক পেজের ক্যাটাগরি: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পেজের সাথে যে ক্যাটাগরি যায় সেটি সিলেক্ট করবেন।
* ফেসবুক পেজের ডেসক্রিপশন: এখানে ২৫৫ অক্ষরের মধ্যে আপনাকে লিখতে হবে। চেষ্টা করবেন আপনার কীওয়ার্ডগুলো রাখতে হবে। ধরুন আপনি হেডফোন, মোবাইল ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদি সেল করেন সেক্ষেত্রে এগুলো ডেসক্রিপশনের মধ্যে রাখবেন।
৩. উপরের তিনটি কাজ হয়ে গেলে ‘Create’ বাটনে ক্লিক করবেন। এবার প্রোফাইল পিকচার ও কভার ফটো আপলোড করবেন। যদি প্রোফাইল পিকচার ও কভার ফটো রেডি না করা থাকে তবে এই ধাপ স্কিপ করে যেতে পারেন।
৪. এবার আমাদের পেজ ব্যবহার করার জন্য পুরোপুরি রেডি। এখন আপনি ‘username’ লেখায় ক্লিক করে পেজের লিংক চেঞ্জ করতে পারবেন। যদি আপনার ইউজারনেম হয় bangladesh তাহলে পেজ লিংক হবে https://www.facebook.com/bangladesh।
৫. ব্যস আমাদের প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়েছে।
ফেসবুক পেজ থেকে যেভাবে আয় করবেন
ফেসবুকে চোখ বুলালেই হাজারো পেজের ভিড়ে আমাদের চোখ ধাঁধায়। মানসম্মত কন্টেন্টসহ একটি ফেসবুক পেজ কিন্তু সহজেই কমবেশি অনেকের নিউজ ফিডেই প্রাধান্য পাবে।
একটি ফেসবুকের পেজ মূল অংশ হলো কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু। ফেসবুক ইউজারদের এই বিশাল সংখ্যার কাছে আপনার পেজের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কন্টেন্টের উপর। মানসম্মত ও সুন্দরভাবে বর্ণিত যেকোনো কন্টেন্ট ভালো ইউজারদের মাঝে সাড়া জাগাতে অনেকটাই সহায়ক। কন্টেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বেশ কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
* আপনার পেজের জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করুন। ফেসবুকে পেজের পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট থাকা কিন্তু বেশ কাজের। আপনার কন্টেন্টের বিশদ বর্ণনা থাকবে এসব ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনি ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা উইবলির সাহায্য নিতে পারেন। ফ্রি ডোমেইনের কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে আপনি অল্প কিছু টাকা খরচ করে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার নিজেরই একটি ওয়েবসাইট।
* “অ্যাডসেন্স (AdSense)” নামক গুগলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যা ওয়েবসাইট থেকে টাকা আয় করার জন্য সাড়া বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত। অ্যাডসেন্সের কাজ হলো ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের সরবরাহ করা এবং বিনিময়ে ওয়েবসাইটের পরিচালনাকারীদের একটি নির্দিষ্ট অর্থ দেয়া।
প্রায়সময়ই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হাজারো অ্যাড আমাদের নজরে আসে এবং এগুলোই আপনার ফেসবুক পেজের ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারবেন গুগল অ্যাডসেন্স যুক্ত করার মাধ্যমে। এর ফলে আপনি আপনার ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।
* ফেসবুকে পেজে নিয়মিত নিত্যনতুন কন্টেন্ট হালনাগাদ করা অনেক জরুরী। বেশি বেশি কন্টেন্ট আপলোড করলে আপনার পেজ প্রতিনিয়তই নতুন নতুন মানুষের চোখে পড়বে, লাইক-কমেন্ট-শেয়ারের পরিমাণও বাড়তে থাকবে দ্রুতই।
* ফেসবুক থেকে আয় এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনার শেয়ার করা কন্টেন্ট যেন অন্য কোনো আর্টিকেলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়। কেননা অনেক ফেসবুক পেজের নিজস্ব কপিরাইট থাকে। অনেক অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট করার মাধ্যমেও আর্টিকেল চুরির বিষয়টা চোখের সামনে চলে আসে। কন্টেন্ট হুবুহু প্রমাণিত হলে ফেসবুক কতৃপক্ষ সেসব পোস্ট তাৎক্ষনাত সরিয়ে দেয়।
অ্যাডভারটাইজিং
অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং এর নাম অনেকেই না শুনে থাকতে পারেন। অনেকসময় ফেসবুক স্ক্রল করে গেলে নিউজফিডে বিভিন্ন অ্যাড আসে, যার নিচে ছোট্ট করে “স্পনসরড” লেখা থাকে। এটিই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং।
অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং প্রোগ্রাম খুঁজে নিয়ে এর জন্য সাইন আপ করলে আপনাকে দেয়া হবে অনন্য একটি আইডি, সঙ্গে থাকবে আপনার অ্যাডভারটাইজিং সম্পর্কিত বিভিন্ন বিজনেস ম্যাটেরিয়াল দেয়া হবে। এসব বিভিন্ন ইউজারদের দ্বারা জেনারেটের মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হতে থাকবে।
অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং প্রোগ্রামের জন্য আলাদা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বিজ্ঞাপনের জন্য আলাদা আলাদা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত। এর ফলে ইউজাররা নিজেদের পছন্দ মত বিজ্ঞাপন খুঁজে নিতে পারবে আর আপনার আয় করার পুরো কাজটাই দ্রুত সম্পন্ন হবে।
আপনার বিজ্ঞাপন যতবার মানুষ দেখবে, ততবারই আপনার আয় বাড়তে থাকবে। সুতরাং বিজ্ঞাপনের প্রোমোশনের বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যেন আপনার পোস্টে ক্লিক করে অ্যাফিলিয়েট থেকে কিছু কেনামাত্র আপনি আয় করা শুরু করতে পারেন।
ফেসবুক অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক থেকে টাকা আয়
আপনার অ্যাপ্লিকেশন এ ফেসবুক অডিয়েন্স নেটওয়ার্কের এড লাগিয়ে সেখান থেকে আপনি ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যদি আপনার মোবাইল অ্যাপ থেকে থাকে অথবা আপনি চাইলে নতুন করে মোবাইল অ্যাপ বানাতে পারেন।
ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে আয়
আপনার যদি পুরনো ওয়েবসাইট মানে ব্লগ থাকে এবং সেখানে যদি আপনার আর্টিকেল থাকে সেগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ার করতে হবে। তার মানে হল আপনার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শেয়ার করতে হবে অথবা আপনার নতুন করে আর্টিকেল লিখতে হবে এবং সে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যদি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে কিছু কন্ডিশন আছে যেগুলো আপনাকে মানতে হবে এবং সেগুলো ফুল ফিলাপ হলে আপনি ফেসবুক পেজ থেকে ইনকাম শুরু করতে পারবেন।
যে কন্ডিশনগুলো আপনাকে পূরণ করতে হবে তার মধ্যে প্রথম হল আপনার ফেসবুক পেজে ৩০ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার থাকতে হবে। তারপর দুই মাসের মধ্যে আপনার ফেসবুক পেজে ৩০ হাজারের উপরে ভিউ হতে হবে এবং তারপর আপনার ফেসবুক পেজের ভিডিওগুলো ৩ মিনিটের উপরে হতে হবে। তারপর যে কন্ডিশন সেটা হল আপনার ভিডিওগুলো কপিরাইট ফ্রি হতে হবে।
যদি আপনার এই কন্ডিশনগুলো ফুল ফিলাপ হয়ে যায় তাহলে আপনি ফেসবুক পেজের মনিটাইজেশন অন করতে পারবেন এবং ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।