পুলক আহমেদ, বেরোবি প্রতিনিধিঃএমন কেউ নেই যে ফুলকে ভালোবাসে না। অথচ এই ফুলের মধ্যে রয়েছে সাড়াজাগানো কিছু রহস্য। বেরোবি কেম্পাসে দেখা মিলল ফুলের হাতে ফুল। শখ করে নয়, পেটের দায়ে এ ফুল বিক্রির জন্য ক্যাম্পাসে আসে রিফাত,সিফাত,আরিফ ও সুজন। তাদের কারোর বাবা নেই, কারোর মা নেই। তাদের প্রতিদিন দেখা যায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক,চত্বর ও মাঠে ।
বিকেলের দিকে হাজারো শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের সামনে তাদের আবদার-থাকে ‘একটা ফুল নিন।’ জীবন-বাস্তবতায় এসব শিশুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নামতে হয়েছে উপার্জনে।
প্রায় সবার হাতে থাকে পদ্মফুল যা তারা ডোবা , বিল বা নালা থেকে নিয়ে আসে এই সব ফুল এবং এই ফুলই এসব শিশু বিক্রির জন্য বেছে নেয়।
কেউ ফুল নেয়, কেউ বা ফিরেও তাকায় না। আবার কেউ কেউ আছেন, ফুলের মতো শিশুর হাতে তুলে দেন অতিরিক্ত টাকা। এভাবেই এসব শিশু উপার্জন করে বাবা-মার হাতে তুলে দিচ্ছে অর্থ,যা সংসার চালাতে কাজে লাগছে।
ক্যাম্পাসের পার্কের মোড়,স্বাধীনতা স্বারক মোড়,হতাশা চত্বর,শেখ রাসেল চত্বর,গ্যারেজ রোড,দেবদারু রোড,কৃষ্ণচূরা রোড ও খেলার মাঠ গুলোসহ বিভিন্ন স্থানে হাতে নিয়ে ফুল বিক্রি করতে দেখা যায় এইসব শিশুকে। এর মধ্যে তারা বেশি পদ্মফুল নিয়ে আসে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ ফুল বিক্রেতাই হয়ে থাকেন পথশিশু এবং অস্বচ্ছল পরিবারের। যাদের অনেকের মা -বাবা থাকা স্বত্বেও অভাবের তাড়নায় তারা এই পথে বেছে নিয়েছে।
তারা চাইলে ভিক্ষা করতে পারতো কিন্তু তা নাকরে অভিনব পদ্ধতিতে ফুল বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এমনকী ক্যাম্পাসে আগত বিভিন্ন দর্শনার্থী ও যুগলদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের কাছে ফুল বিক্রির জন্য আজকাল এই ফুল বিক্রেতা পথশিশুরা টুকটাক শুদ্ধ ভাষাও শিখছে। আর তাদের এই শুদ্ধ ভাষা শিখতে সাহায্য করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বড় আপু ও ভাইয়ারা। তবে এসব শিশুরা দুই হাত পেতে ভিক্ষা নিতে একদমই নারাজ।
তাদের মধ্যে একজন হলেন রিফাত। যার বয়স ১০ বছর। এই বয়সে তার মায়ের কোলে থেকে স্কুলে যাওয়ার কথা কিন্তু সে স্কুলে না গিয়ে বিকেলে করে ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রির পথ বেছে নিয়েছে। পরিবারের সাত ভাই বোনের মধ্যে সে ছয় নম্বর। সে বলল সারা বিকেল ফুল বিক্রি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পায়। এই টাকা সে তার মা বাবাকে দেয়। যা তাদের পরিবারের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়োজন মিটাতে সহায়তা করে।
সিফাত নামের আট বছরের এক ছেলে। যে ক্লাস টুয়ে পড়ে।সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা গুলোতে থাকে। সে সাত ভাইবোনের মধ্যে সে তিন নাম্বার। ঠিক মত বই পড়তে পারে না। সে সারাদিন ফুল বিক্রির করে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পায়। তার বাবা কৃষি কাজ করে। তাই সে ফুল বিক্রি করে এই টাকা তার বাবাকে দেয় যা তাদের পরিবারের ভরনপোষণের কাজে সামান্য হলেও সহায়তা করে।