বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নি-বীণা হলের ডাইনিং পরিচালনা করছিলেন তারা মিয়া। ১০ লাখ টাকার খাবার বাকী দিয়ে নিঃস্ব হয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ডাইনিং-এর সবকিছু গুছিয়ে রেখে বিদায় নিয়েছেন তারা মিয়া। আর খাবারের তালিকা লেখার বোর্ডে লিখে গেছেন ‘আজ থেকে বিদায়’। আর সাথেই লিখে গেছেন তার নাম। বোর্ডের উপরে দিয়ে গেছেন তার মোবাইল নাম্বার। এই আশায় যে যারা বাকী খেয়েছেন তারা যাতে যোগাযোগ করে যেন টাকা পরিশোধ করে দেন।
তারা মিয়ার একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল ডাইনিং পরিচালনা। এটার উপরেই নির্ভর করে তার পরিবার চলতো। হঠাৎ করে এভাবে চলে যেতে হবে ভাবতে পারিনি তিনি। তারা মিয়া ২০১৯ সাল থেকে ডাইনিং পরিচালনা করে আসছে। মাঝখানে করোনার কারণে ডাইনিং বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে আবার ডাইনিং-এ খাবার পরিবেশন শুরু করেন। আর ২০২১ থেকে ২০২২ সালেই তার প্রায় ১০ লাখ টাকার খাবার বাকী খেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো বকেয়ার হিসাব তার খাতায় লিখিত রয়েছে। আর বাকী টাকার হিসাব মৌখিকভাবে কিংবা বিভিন্ন প্যাডে লিখে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
ডাইনিং পরিচালক তারা মিয়া বলেন, “আমি ২০১৯ সাল থেকে ডাইনিং পরিচালনা করছি। এর আগে ২০১০ সালেও ১ বছর পরিচালনা করেছি। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে হঠাৎ করে আমাকে ডাইনিং ছাড়তে বলা হলো। আমার ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সবমিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো বাকী রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এই টাকা আমি কিভাবে পাবো? বিভিন্ন সময়ে অনেকজন এসে একসাথে এসে খাবার খেত। টাকা চাইলে বলতো নেতা দিবে। কিন্তু সেই টাকা আজও পাইনি। ডাইনিং পরিচালনা শুরু করার সময় কোনো চুক্তিপত্র দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে অফিসে বারবার চুক্তিপত্র চাইলেও আমাকে দিবে দিবে বলে আর দেয়নি। এখন হঠাৎ করে আমাকে ডাইনিং ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। রাকিব ভাই আমাকে বিদায় দিয়ে দিছে। সেক্রেটারি বলেছে, আমার থাকার কোনো সুযোগ নাই যেন জিনিসপত্র গুজাই।”
তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিব এমন অভিযোগকে নাকচ করে বলেন, ” চুক্তিপত্র ছাড়া সে কিভাবে ডাইনিং পরিচালনা করে। আর চুক্তিপত্র দিবে হল প্রশাসন আমি দেওয়ার কেউ না। যেহেতু তার চুক্তিপত্রই নেই সেহেতু তার এরকম অভিযোগ দেওয়ারও কোনো সুযোগ নাই। এরকম অভিযোগ না করে সামনাসামনি এসে বলুক। আমরা হল প্রশাসনের সাথে বসে সমাধান করবো। হল প্রশাসন যদি তাকে চুক্তিপত্র ছাড়াই থাকতে দেয়। সেক্ষেত্রে এখানে আমরা কে কথা বলার? আর মৌখিকভাবে এত টাকা কিভাবে হয়? সে কার কার কাছে টাকা পায় সামনাসামনি এসে বলুক। আর আমি হলেই থাকি না তাহলে আমি তাকে হল ছাড়তে বাধ্য করবো কিভাবে? আর চুক্তিপত্র ছাড়া হলের ডাইনিংই বা পরিচালনা করলো কিভাবে?”
তবে এই বিষয়ে অগ্নি-বীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, ” আমার আগের যিনি হল প্রভোস্ট ছিলেন তার সময়ে ডাইনিং পরিচালক নিয়োগ হয়। তার সাথেই চুক্তি হওয়ার কথা। আমার সময়ে হলে আমি দিতাম। যেহেতু আমার সময়ে হয়নি তাহলে আমিতো চুক্তিপত্র দিতে পারিনা। আর সে এতদিন ছিল জন্য আমি তাকে থাকতে দিয়েছি। আমার কোনো আপত্তি ছিলনা। কিন্তু তার অনেক টাকা বাকী পড়ার কারণে সে থাকতে পারছে না। হল প্রশাসন রাখতে চাইলেও বাস্তবার নিরিখে সে থাকতে পারেনি। এক্ষেত্রেতো আমরা কিছু করতে পারবো না। নতুন যারা এসেছে তারা কাগজে কলমে লিখিত ডকুমেন্ট পাবে।”