The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রশ্নফাঁস! কি ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা?

গত ৭ই জুন রবিবার বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে প্রশ্নফাঁসের ভয়াবহ চিত্র।প্রতিবেদনে বলা হয় গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিসিএস প্রিলি-লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ৩০ টি পরিক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অর্ধ ডজন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা মিলে এ প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি ঘটিয়ে আসছিলো বলে জানা যায়।
সর্বশেষ গত ৫ই জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬ টি পদের নিয়োগ পরিক্ষাও প্রশ্নফাঁস করে এ চক্রটি।

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে তার মাঝে আবার প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর ঘটনা সামনে এলো।

প্রশ্নফাঁসের এ ঘটনা নিয়ে কি ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এবং এ থেকে উত্তরণেরই বা পথ কি?

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছেন মোঃ রাহাদ আলী সরকার-

দুর্নীতি উন্নতির অন্তরায়

একটা জাতির উন্নতি,অগ্রগতি নির্ভর করে সে জাতির শিক্ষার উপর।আমরা শিক্ষিত হয়েছি ঠিকই তবে সুশিক্ষিত হতে পারি নি।আমাদের দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র যেন দুর্নীতির একটা আখড়া হয়ে দাড়িয়েছে।
এ দেশের শিক্ষাখাতের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু সর্বোচ্চ চাকরি বিসিএস।

আমি যখন ২০১৭ সালে এসএসসি দেই সে-সময় প্রশ্নফাঁসের মতো জঘন্যতম ঘটনার সাক্ষী হই যা মেধাবীদের সাথে এক প্রকার প্রতারণার শামিল। একে তো আমাদের সাথে কোটা নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে তার উপর আবার প্রশ্নফাসের মতো ঘটনা এ যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।

গত দু’দিন আগেও আমরা দেখতে পাই রেলওয়ের প্রায় ৫০০ পদের নিয়োগ পরিক্ষায় ৭০০ জনের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়েছে। তারমানে এখানে মেধাবী তো দুরে থাক দুর্নীতিগ্রস্থদের মাঝেই প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
যদি এই হয় দেশের চাকরির অবস্থা তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে কি করবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

আমাদের দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অবস্থানও যেন প্রশ্নবিদ্ধ,কি যেন এক অজানা কারণে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে এসব চোর,দুর্নীতিবাজ লোকরা বেরিয়ে যায়।আদতে এ সমস্যার সমাধান তারা করতে চায় কি না? নাকি সব লোকদেখানো সেটা নিয়েও ভাবার সময় এসে গেছে।

তাই আমার মনে হয় কোটা আন্দোলন নিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে যদি ভবিষ্যতে এসব প্রশ্নফাঁস রোধ না করা যায় তাহলে আমাদের দেশের জন্য সেটি অশনি সংকেত বয়ে আনবে বলে আমার মনে হয়।তাই এখনি সময় এসব দুর্নীতিবাজদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার,সামাজিক ভাবে বয়কট করার।

মোঃ তানভীর হোসাইন, সামুদ্রিক আইন ও নীতি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি।

আলাদা কমিশন গঠন করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি

পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে অর্থনীতি,রাজনীতি,সামাজিক,সরকারি চাকরি প্রায় সকল ক্ষেত্রে যে বৈষম্য ছিলো স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরেও যেন বৈষম্যের আরেক নাম এ কোটা।একদিকে আমরা কোটা নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি একটা জাতিকে মেধাবী আমলা উপহার দিতে কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো জায়গায় গিয়ে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
আমরা যে দেখলাম এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ প্রশ্নফাঁস হয়ে আসছে তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি আমরা সঠিক,অবাধ মেধাবীদের হাতে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র তুলে দিতে পেরেছি? নাকি মেধাবীর আড়ালে এসব অসৎ,দুর্নীতিগ্রস্থদের আমলা হিসেবে পাচ্ছি।

গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে এ চক্রটি প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধ করে যেমন মেধাবীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো তেমনি রাজনৈতিক বেশ ধরে সাধারণ জনগণকেও ঠকিয়ে আসছিলো।
কত মেধাবীর রাত দিন এক করে পড়াশোনা,ক্লান্তি ভরা শরীরে এক দন্ড বিশ্রাম নিতেও যে দ্বিধাবোধ করতো সেই মানুষটা যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও অসৎ,প্রশ্নফাঁস কারী চক্রের টাকার কাছে হেরে যায় তখন আর কিছু বলার থাকে না।

বিসিএসের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাকরিতে যদি এরকম প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে তাহলে অন্যসব সরকারি চাকরিতে কি অবস্থা হয় তাহলে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।তাই যতদ্রুত সম্ভব এসব মুখোশধারী মানুষদের জনসমক্ষে এনে আলাদা কমিশন গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে করে অন্যসব দুর্নীতিবাজদের টনক নড়ে এবং আমরা ভবিষ্যতে অবাধ সুষ্ঠু চাকরি নিয়োগ পরিক্ষা পাই।

মোঃ রোবায়েত হোসেন জয়, সমুদ্রবিজ্ঞান ও জললেখবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি।

মেধাবীরা তাদের নায্য অধিকার ফিরে পাক

আমি যে সরকারি চাকরিতে কোটার একদম বিপক্ষে সেইটা বলবো না। কোটা থাকুক তবে সেইটা নুন্যতম পর্যায়ে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা,পোষ্য কোটা,নারী কোটা, জেলা কোটা সব কোটা মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ শুধু কোটাতেই ভরপুর। এইটা বাংলাদেশের মতো একটা দেশে কখনোই গ্রহনযোগ্য বলে আমি মনে করি না। কোটার এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে দেখা যায় না। এতো এতো কোটার মধ্যে মেধা যারা আছে তারাতো এমনিতেই দিশেহারা । ৫৬ শতাংশ বাদে এই বাকি ৪৪ শতাংশেও যদি মেধাবীরা জায়গা পেতো তবুও একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলা যেতো। ওই ৪৪ শতাংশের মধ্যেও দুর্নিতির আনাগোনা ভরপুর। অন্যান্য সেক্টরের কথা বাদ ই দিলাম এতো দিন বিপিএসসি মেধাবিদের একটা অন্যতম আস্থার জায়গা ছিলো কিন্তু সেটা নিয়েও এখন আশংকা দেখা দিয়েছে। মেধাবিরা তাহলে যাবে কোথায় দেশেতো তাদের দেখার কেউ নেই আস্থার কোনো জায়গা নেই। তাহলে কি এই দেশ মেধাবিদের জন্য না? সেই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।
আর এভাবেই যদি চলতে থাকে তরুণ-তরুণীরা তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে এবং দেশ ছাড়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
আর এভাবে মেধাবীরা দেশ ছাড়লে দেশ চালাবে শুধুমাত্র অযোগ্য,দুর্নীতিগ্রস্থরা ।

তাই একটি সম্ভাবনাময় সোনার বাংলাদেশ গড়তে এখনই সবাইকে সোচ্চার হতে হবে,আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।অন্যথায় এ দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে বলে আমার মনে হয়।

মোঃ সাকিব আল হাসান, ইইই বিভাগ,উত্তরা ইউনিভার্সিটি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.