মো. জাহিদ হোসেন, মাভাবিপ্রবি: ১লা জুলাই ২০২৪ইং থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বন্ধ রেখেছেন ক্লাস,পরীক্ষা ও সর্বপ্রকার একাডেমিক কার্যক্রম।
এছাড়া সার্বজনীন পেনশন স্কীম বিধিমালা-২০২৩ এর প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অর্ন্তভুক্তি প্রত্যাহার ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালার ১২ দফা সংযোজনের দাবিতে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের আহ্বানে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক এই কর্মবিরতি নানা উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।
প্রত্যয় স্কীম ও সর্বাত্মক কর্মবিরতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা:
বিএমবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যয় স্কিম এটি যারা সরকারি চাকরি করে তাদের জন্য ক্ষতিকর তবে যারা বেসরকারি চাকরি করে তাদের জন্য এটা ভালো। শিক্ষকদের এর আওতা থেকে বের করাই উত্তম। শিক্ষকদের কর্ম বিরতির জন্য স্টুডেন্টদের ক্ষতি হচ্ছে। তবে তারা যৌক্তিক বিষয়ে আন্দোলন করতেছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়া। শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দ্রুতই এর সমাধান হওয়া উচিত।
অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স বর্ষের শিক্ষার্থী রিমন সরকার বলেন,”শিক্ষার্থীরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেই তবে যদি এই প্রত্যয় স্কীম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও চালু হয় তবে যোগ্য ও মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসার আগ্রহ হারাবে।”
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পলাশ আহমেদ বলেন, “আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই একটি মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এজন্য রাষ্ট্রের উচিত তাদের বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা। আমরা শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হই এ বিষয়ে শিক্ষকদের নজর রাখা উচিত। আমরা শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আমাদের চলমান পরিক্ষা স্থগিত হয়েছে এখন আমরা সেশন জটের চিন্তায় পড়েছি। শিক্ষকদেরও উচিত শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা এতে ছাত্র-শিক্ষক একটা ভালো সম্পর্ক গঠন হবে।”
পদার্থ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান রাব্বি বলেন, “সম্মানজনক পেশা হিসেবে পদটি ধরে রাখার জন্য আন্দোলন অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু সেই সাথে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন।
আমি মনে করি নতুন ভর্তি বন্ধ করে দিলে প্রশাসন ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এর ভোগান্তিতে পরবে তখন মেনে নিতেই হবে। এখন যেটা হচ্ছে সেটায় আমরাই শুধু দোটানায় আছি কি হবে? আর আমাদের নিয়ে সরকার ভাববে না। কারণ তাদের এখন ভাবার চিন্তা ভিন্ন। তাই সবচেয়ে ভালো হয় বিচক্ষণতা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করা।”
অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার নিউলি বলেন, “প্রত্যয় স্কীম না মেনে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে যাওয়া আমি যৌক্তিক মনে করি। কারণ,প্রথম সারির একজন স্টুডেন্ট শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। যখন একজন প্রথম সারির স্টুডেন্ট দেখবে আমি এই পেশায় নিয়োজিত হলে, পেনশন থাকছে না এবং বর্তমান বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কথা মাথায় রেখে আর যাইহোক সে এই পেশায় আসতে চাইবে না। সরকারের উচিৎ এ বিষয়ে অধিক মনোযোগী হওয়া এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কর্মবিরতি অপসারণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করা। কারণ,ঠিক সময়ে পরীক্ষা না নিতে পারলে,সেশনজট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।এ দিকে চাকরির বয়সও সীমিত।
শিক্ষকদের মতামত:
শিক্ষকদের যৌক্তিক এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপর কোনোরূপ প্রভাব ফেলবে না এমন আশ্বাস দিয়ে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদার রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে না পড়ে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। কোভিডের সময় আমরা যেরকম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতিটুকু সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি, এবারও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।”