The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গবেষক উপাচার্য চায় জাবি শিক্ষার্থীরা

জাবি প্রতিনিধিঃ দিনটি ছিল মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ১৯৭১; পৌষ ২৭, ১৩৭৭; ১৪ জিলকদ, ১৩৯০, বিকেল। পাকিস্তান নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও চ্যান্সেলর হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এডমিরাল আহসান তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ কমাতে নয়, শিক্ষার মান বাড়াতেও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কারখানা থেকে কারিগরি কর্মী তৈরি না করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণের কারখানা হিসেবে পরিচালনা করা হবে। আদর্শ, মূল্যবোধ, জাতীয় গর্ব এবং ঐতিহ্যের প্রজনন ক্ষেত্র হবে এ বিশ^বিদ্যালয়।”

ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন এবং দূষণের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলা সীমান্তে ৭৫০ একর জমির ওপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আয়োজন করা হয়।

অর্থাৎ বিশ^বিদ্যালয়টির বিশেষত্ব নির্ধারণ করা হয় শিক্ষা-গবেষণায় অনন্য এক বিদ্যাপীঠ হিসেবে। প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রথম উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সে অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়টি সাজানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন।

কিন্তু উপাচার্য পদে আসীন হয়ে পরবর্তীতে অনেকেই সে উদ্দেশ্য বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। জড়িছেন নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে। আবার অনেকেই তাদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের মুখে পদ ছেড়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শ্ক্ষিার্থীদের উপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অথিযোগ মাথায় নিয়ে উপাচার্য পদ ছেড়েছেন অধ্যাপক নুরুল আলম। কে হচ্ছেন জাবির পরবর্তী উপাচার্য? এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার যেন কমতি নেই। তবে শিক্ষার্থীদের চাওয়া উপাচার্য নিয়োগে দক্ষ গবেষককে প্রাধান্য দেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী গালিব আব্দুল্লাহ বলছেন, বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণার মানকে আরও উন্নয়ন করতে পারবে এমন কাউকেই উপাচার্য পদে দেখতে চাই। ব্যক্তি হিসেবে স্বচ্ছ, সুশিক্ষিত, দূরদর্শী এবং আলোকিত মনের মানুষকে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আসীন দেখতে চাই। একই সাথে যিনি হবেন পেশাগত দায়িত্ব পালনে শতভাগ সৎ।

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রউফ শিক্ষানুরাগী, গবেষণাবান্ধব এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো শিক্ষক-কে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন।

এ প্রতিবেদন তৈরিতে বিশ^বিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ এবং চারটি ইনস্টিটিউটের আরও বিশজন শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একমাত্র ভিন্নমত পোষন করেছেন প্রত্নতত্ববিদ্যা বিবাগের মোস্তাফিকুর রহমান। তিনি গবেষণাবান্ধব গুনাবলির পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতাকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনার কথা বলেছেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচিত কয়েকজন শিক্ষানুরাগী, গবেষণাবান্ধব এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকের নাম ঘুরেফিওে এসেছে শিক্ষার্থীদের মন্তব্যে। তাদের মধ্যে একজন হলেন রসায়ন বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ এনামউল্লাহ।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া এ গবেষক উচ্চতর শিক্ষা ও  গবেষণা করেছেন জার্মানি, কানাডা, জাপানের কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ে।

তিনি বর্তমানে কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, জাপানের টোকিও ডেনকি ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে উচ্চতর শিক্ষা ও  গবেষণার সাথে যুক্ত রয়েছেন। টপ-র‌্যাংকিং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন এ গবেষক। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টর, প্রভোস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও তিনি সামলিছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স-২০২৩ এর স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন। জীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ গবেষণা জীবনে এক দশকেরও বেশি সময় তিনি জাপানের বিভিন্ন খ্যাতনামা গবেষণাগারে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক হিসেবে কাজ করেন। শতাধিক উচ্চ মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি তিনি বেশকিছু গল্প-উপন্যাসও লিখেছেন। সেগুলো হলো-আলো (২০০২), দিঙমূঢ় (২০০৭), জোছনা জলে জলসিঁড়ি (২০০৮), নৈঋতী (২০১১), জাপানি দিনরাত্রির গল্প (২০২৩), হাজিমেমাশোও জাপানি দিনরাত্রির গল্প (২য় খণ্ড, ২০২৪), ব্যাকস্টেজ ইন দ্য সিম্মেলা স্টোরি (২০২৪)।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী গবেষক অধ্যাপক এম. মাহফুজুর রহমান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বর্তমানে প্ল্যান্ট ইকোলজি এবং এনভায়রনমেন্ট ল্যাবরেটরি নামে একটি গবেষণাগারে উচ্চতর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইকোসিস্টেম কমিশন-বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স এর সদস্য অধ্যাপক এম. মাহফুজুর রহমান টপ-র‌্যাংকিং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।

জাপানের গুন্মা বিশ্ববিদ্যায়ের মেডিক্যাল বিভাগ থেকে এইচআইভি ভাইরাসের ওপরগবেষণা করে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আরেক খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম। গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স-এর জুনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস-এর স্কুল অব অপটোমেটরি অ্যান্ড ভিশন সায়েন্সের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলোও মনোনিত হয়েছেন ড. সালেকুল ইসলাম। ড. সালেকুল ইসলাম ৩০জনের অধিক স্নাতকোত্তর, এম.ফিল এবং পিএইচ.ডি ছাত্র-ছাত্রীদেরও গবেষণা কর্ম তত্ত্বাবধান করেছেন। তার শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্বের খ্যাতিমান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

মোঃ ইমদাদুল ইসলাম ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন এমএসসি। তিনি থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে সিএএস প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন।

তার গবেষণার ক্ষেত্র হল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনস, ওয়েভলেট ট্রান্সফর্ম, অ্যাডাপটিভ ফিল্টার থিওরি, কম্পিউটেশনাল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার দুই শতাধিক গবেষণাপত্র রয়েছে।

এছাড়া আলোচনায় থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত রেজিস্ট্রারড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করপছেন তিনি।

কোটা আন্দোলনসহ বিভিন্ন ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে তার সরব উপস্থিতি ছিলো।

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানাও সবসময় ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র জনতার উপর হামলা চালানো হলে তিনি তার অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে আলোচনায় আসেন।

এছাড়াও উপাচার্য পদে আলোচনায় আছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন রুনু এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুর রব।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.