সঞ্জয় হরিজনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শব্দের দীর্ঘতম অনুভূতির নাম হচ্ছে ‘মা’। ‘মা’ ধ্বনি আমাদের কর্ণে শব্দের কম্পন আন্দোলিত হয় ঠিকই তবে এর মর্মার্থ দোল খেতে থাকে আমাদের হৃদয়ে। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় কোন একটি শব্দ শোনার পর ০.১০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্রোতার মস্তিষ্কে এর অনুভূতি থেকে যায়। তবে মা শব্দ শোনার অনুভূতি কোনো সাংখ্যিক মানের মধ্যেই কি সীমাবদ্ধ? প্রতিউত্তরে যদি বলতেই হয় তবে বলতে হবে ‘মা’ হলেন- সৃষ্টিকর্তার এমন এক অলৌকিক উপহার যিনি সাধারণত ৯ মাস (৭-১০) দিন গর্ভে ; ৩ বছর কোলে এবং পরবর্তী অবশিষ্ট সময়ে আমৃত্যু নিজের হৃদয়ে রাখতে অসন্তুষ্ট হোন না। মাকে সংজ্ঞায়িত করার মত সাধ্য আমাদের নেই। তবুও তাঁর প্রতি আমার অনুভূতি যেন হৃদয়ে আন্দোলিত করছে প্রতিক্ষণ। মা হলেন এমন এক নিঃস্বার্থ ব্যক্তির নাম যিনি ৯ মাস বা ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন (প্রায়) ত্যাগ-তিতিক্ষা উপেক্ষা করে অবশেষে আমাদের মত একটি প্রজ্বলিত প্রদীপ জন্ম দিতে গিয়ে হয়তো হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেন কিংবা বেঁচে থাকেন আমাদের মাঝে। ধরণীতে আমরা ভূমিষ্ঠ হলে সর্বপ্রথম মায়ের দৃষ্টি কাড়ে প্রসব হওয়া সন্তানের প্রতি। এই দৃষ্টির মধ্যে লুকায়িত থাকে মায়া জড়ানো মমতা, ভালোবাসা, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার প্রাপ্তি।
গর্ভবতী মা, সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় যে ব্যথা পেতেন তিনি যেন ঈশ্বর হতে প্রাপ্ত স্বর্গীয় ব্যথা অনুভব করেন। তাইতো আমরা বীরপুরুষের ন্যায় বজ্রকন্ঠে বলি- আমরা এমন একজন বীর জননীর সন্তান যিনি আমাদেরকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুকে জয় করেছেন। তিনি একজন বীর জননী হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন দার্শনিকও বটে। যিনি কিনা সন্তানের মুখশ্রী দেখা মাত্র-ই বলে দিতে পারেন সন্তানের ভালো-মন্দের গল্প। উনাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ডাক্তার বললেও ভুল হবে না। কারণ, সন্তান জীর্ণতায় ভুগলে মায়ের হাতের স্পর্শ, মায়ের আঁচলের অমৃত গন্ধ সুস্থ করে তোলে ক্ষণিকের মাঝে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সৌন্দর্য বহন করে মায়ের মুখে। মা হলেন শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শ্রেষ্ঠ দায়িত্ববান, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানদাতা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে- মায়ের দুগ্ধ। এইজন্যই বিখ্যাত শিল্পী
” ফকির আলমগীর ” বলেছেন-
মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,
পাপোশ বানাইলেও ঋনের শোধ হবে না,
এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো।
১৪ ই মে হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। মা দিবস মানে হচ্ছে মাকে ভালোবাসা, মায়ের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা, সম্মান, প্রাপ্যতা, পুণ্য সবকিছুই তাঁর পায়ে অর্পণ করা। উক্ত দিনে কেক কেটে উদযাপন করে পুরো ধরনীর সন্তানেরা। মেতে উঠে পৃথিবীর সকল মায়েরা তাঁদের সন্তানের আবেগময় ভালোবাসা দেখে। মায়েরা হয়তো ভাবে সেদিন- ‘ মা ‘ কে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বা উপলক্ষের প্রয়োজন আছে কি? মা কে তো সব সময় ভালোবাসা যায়। মায়ের এই হৃদয় নিঙড়ানো বক্ষ ব্যাথার গল্প শোনা যায় এদেশের মায়ের বিলাসিতা জীবন-যাপনের আবাস্থল বৃদ্ধাশ্রম থেকে। বর্তমানের যান্ত্রিক শহরের নোংরা কাজের মধ্যে একটি অন্যতম যে, বছরের ৩৬৪ দিন বৃদ্ধাশ্রমে পালিত করে ১ টি দিনের জন্য সন্তান তাঁকে নিজ গৃহে এনে বউ, নাতি-নাতনীদের সামনে রেখে বড় কেক কাটার মাধ্যমে পালিত হয় ঐ মায়ের ‘ মা দিবস ‘। এটি লোক দেখানো ভালোবাসা দেখিয়ে সোশাল মিডিয়াতে চলছে তাদের রাজত্ব। অথচ ওই ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘ মা তোমাকে ভালোবাসি ‘ লিখতে পারে কিন্তু মা কে জড়িয়ে ধরে এটি বলতে পারে না। নেয় না কোনো শরীরের খোঁজ, নেয় না মায়ের রাতের খাবারের পর ওষুধ গ্রহনের খবরটুকু। ভুলে যায় প্রসবকালীন মায়ের যন্ত্রণার কথা, সামান্য বয়স হলেই ছেড়ে আসে বৃদ্ধ মা কে তারই (সন্তানের) দেখা সম্ভ্রান্ত বৃদ্ধাশ্রমে। এই প্রাপ্তিই কি ছিলো সেই মায়ের? এই স্বপ্নই কি দেখেছিলেন যখন সন্তানটি গর্ভে ছিল? তাই মাকে ভালোবাসুন, মায়ের প্রতি যত্ন নিন, মাকে সম্মান দেখান, মায়ের প্রতি বিনম্র আচরন করুন। খুব কষ্টে আপনার জীবন কাটলে মা কে জড়িয়ে ধরুন ততক্ষণ, যতক্ষণ না আপনার মনে প্রশান্তির বীজ উদয় হয়। মায়ের জন্য শুধু একদিন ‘ মা দিবস ‘ নয় বরং প্রতিদিন হোক আপনার মায়ের জন্য ‘ মা দিবস ‘। মা কে ভালোবেসে এই কথাটি যেনো বলতেই হয় –
মা রে তুই তো মমতাময়ী
ভালোবাসি বড়-ই তোঁকে,
পৃথিবীর কেউ-ই তো অমর নয়
কষ্টে রই এই শোকে।
তোকে ভালোবাসার কিসের নির্দিষ্ট দিন?
তোঁর-ই পায়ে অর্পণ করলাম
আমার সকল ঋণ।
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।