গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ডের ফলপট্টিতে পেয়াজুর এক বিশাল সম্ভার। পেয়াজুর দোকনটি পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলার বরইতলীর বাসিন্দা মো. মাহফুজুর রহমান মাসুদ খান। সারাদিন ভিড়বাট্টা লেগেই আছে তার দোকানে। চাহিদা বেশি হওয়ায় এবং ক্রেতাদের সামলাতে মাসুদের দোকানে কাজ করেন ২০-২৫ জন কর্মচারী। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেন তারা।
মাসুদের দোকানে পেয়াজু ছাড়াও পাওয়া যায় বেগুনি, আলুর চপ ও সেদ্ধ ছোলা। তবে পেয়াজুর জন্য মাসুদের দোকান সমধিক পরিচিত। মাসুদের পেঁয়াজুর এই স্বাদে মোহিত হয়ে কালিয়াকৈর ছাড়াও গাজীপুরের নানা অঞ্চল, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, ময়মনিসংহ, জামালপুর এমনকি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসে পেঁয়াজু কিনে নিয়ে যান।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ফুটপাতে পেঁয়াজুর ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাসুদ। ধীরে ধীরে বড় হয়েছে ব্যবসা। এখন শুধু কর্মচারীর বেতনই দিচ্ছেন মাসে ছয় লাখ টাকা। শুধু পেঁয়াজু বিক্রি করেই মাসুদ হয়েছেন কোটিপতি। এই ব্যবসা করেই জমি কিনে নির্মাণ করেছেন পাকা দালান, বিয়ে দিয়েছেন তার ৬ বোনকে।
মাসুদ প্রথমে ২ টাকা দরে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন মাসুদ। বর্তমানে তা ১০ টাকা। মাসুদের দোকানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। শুক্রবার ১ লাখ টাকার উপরেও বিক্রি হয়, রমজান মাসে দেড় লাখ টাকার বেশিও বিক্রি হয়। ক্রেতার ভিড়ে মাঝে মাঝে দুপুরে খাবার যেতে পারি না বলেও জানান দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন।
মাসুদের দোকানের কারিগর আইয়ুব আলী ১০ বছর ধরে পেঁয়াজুসহ নানা ভাজাপোড়া তৈরি করছেন। তিনি বলেন, আমাদের পেঁয়াজু স্বাদ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। আমরা নিজেদের বানানো কিছু মসলা ব্যবহার করি, তাই এত বেশি স্বাদ হয়।
সেই বিশেষ মসলার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এগুলো বলা যাবে না।’ আইয়ুব আলীর মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। তবে রমজান মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পান।
দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন বলেন, ‘২২ বছর ধরে এই দোকানে চাকরি করছি। এই চাকরি করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তিনতলা বাড়ি করেছি। মাসে এখান হতে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পাই, বেতন-ভাতাসহ কোনো কোনো মাসে ৫০ হাজার টাকাও পাই।
দোকানের মালিক মাসুদ খান বলেন, ‘৩০ বছর আগে ফুটপাতে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করি। পেঁয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। একটা সময় অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু হাল ছাড়িনি। এই ব্যবসা করে বোনদের বিয়ে দিয়েছি, হোটেল করেছি, বাড়িতে বিল্ডিং করেছি। ২৫ জন কর্মচারি-কারিগর নিয়মিত কাজ করছেন। এ ছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কিছু নারী কারিগর রয়েছেন। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তাদের ছয় লাখ টাকা বেতন দিই।