‘পুলিশ কিংবা বৃষ্টি আমরা কোন বাঁধাকে ভয় পাইনা’ খুবি শিক্ষার্থীরা
খুবি প্রতিনিধি: সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বাহলের রায় বাতিল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে টানা অষ্টম দিনের মত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে খুলনার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এসময় তারা খুলনা-ঢাকা, বাগেরহাট-খুলনা, যশোর-খুলনা ও সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
তবে দুপুর ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরে পুলিশ তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে নগরীর জিরো পয়েন্টের মহাসড়ক অবরোধ করেন।
দুপুর ৪টার দিকে কয়েক শত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে সমবেত হয়। এসময় তারা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে নগরীর জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এসময় তাঁদের হাতে জাতীয় পতাকা, ঢোল, প্ল্যাকার্ডসহ বিভিন্ন ব্যানার ছিল। এ সময় পুরো খুলনার সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পুলিশ জলকমানসহ ও সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ প্রবেশ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে পুলিশদের সরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারী প্রতিনিধির সাথে কথা বলে তারা খান জাহান আলী সেতুতে কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেয়।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ওয়াশরুম ব্যবহার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছিল। অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নগরীর জিরো পয়েন্ট। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কোটাপ্রথা চাই না,’ ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নেমেছে, রাজপথ কেপেছে,’ ‘ছাত্রসমাজ নেমেছে, রাজপথ কেপেছে,’ ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন,’ ‘ছাত্রসমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন,’ ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘৭১ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার,’ এমন নানান স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কোন বাঁধাকে ভয় পাই না। কোন শক্তি আমাদেরকে আটকে রাখতে পারবেনা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান থেকে সরবোনা। আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজাদ বলেন, ‘কোন ধরনের শক্তি আজ আমাদের আটকাতে পারবেনা। দাবি আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো। বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হলে আমাদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এরপরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে।