ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী মস্কোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। তারা রুশ সামরিক নেতৃত্বকে ‘শায়েস্তা করার ঘোষণা দিয়েছে। ওয়াগনার প্রধানের ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে হটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
প্রিগোজিনের সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে শনিবার (২৪ জুন) অডিওবার্তায় ওয়াগনার প্রধান বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা শেষ পর্যন্ত যাবো। আমাদের পথে যা কিছু দাঁড়াবে, যারায় দাঁড়াবে আমরা তা ধ্বংস করেই সামনে এগিয়ে যাব।
এদিকে, ওয়াগনার গ্রুপের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ওয়াগনার বাহিনী দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। অন্যদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরআইএ নভোস্তির জানিয়েছে, রোস্তভ অঞ্চলের রাস্তা শান্ত রয়েছে। কিন্তু পুশকিনস্কায়া রাস্তায় ট্রাফিক অবরোধ করে দেয়া হয়েছে। তবে অবরোধের কারণ সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
ওয়াগনারের ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রচেষ্টা’ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক আপডেট রাখছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ১৬ মাস আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সম্ভবত এটিই তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস। ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির বাহিনীকে প্রিগোজিনের আদেশ উপেক্ষা করে তাকে গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
যদিও ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা তাদের কমান্ডারের হুমকি কার্যকর করতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে, এমন চিহ্ন এখনো দেখা যায়নি। তবে একটি রুশ হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছেন প্রিগোজিন।
বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (২৩ জুন) তিনি রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়াগনার সেনাদের ওপর মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছেন এবং প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার দাবি- ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তার অনেক সৈন্য মারা গেছে। এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে মস্কোর সামরিক নেতৃত্বকে শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ওয়াগনার প্রধান। তার অভিযোগ- বাখমুতের যুদ্ধে ঠিকঠাক অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি। এছাড়া ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যরা যাতে পিছু হটতে না পারে সেজন্য মাইন পুতে রেখেছিল মস্কোর সামরিক বাহিনী।
শনিবার টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে বাসিন্দাদের শান্ত থাকতে বলেছেন রোস্তভ অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাসিলি গোলুবেভ। একই সঙ্গে দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন তিনি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় সব কিছুই করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ওয়াগনার বাহিনী এই অঞ্চলটিতে প্রবেশ করেছে বলে প্রিগোজিনের দেয়া ঘোষণার পরপরই গভর্নরের পক্ষ থেকে এই সতর্কতা এসেছে।
মস্কোর স্থানীয় সাংবাদিক ভ্যাসিলি পোলোনস্কি সিএনএনকে বলেন, মস্কোর পরিস্থিতি শান্ত আছে। সরকারি ভবনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই শহরে চলাচল ও পার্টি করছে। তবে রাস্তায় প্রিগোজিনের বাহিনী নিয়ে সাধারণ মানুষকে আলাপ করতে দেখেছেন স্থানীয় এই সাংবাদিক। এছাড়া সেন্ট্রাল মস্কোতে সামরিক সরঞ্জামের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবন ঘিরে সামরিক বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।