The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

পিয়ন থেকে ১০০০ কোটি টাকার কোম্পানির মালিক!

মনের মাঝে অনীহা ও অনিচ্ছা নিয়ে খুব বেশি দূর এগোনো যায় না, যেমন শুরুতে এগোতে পারেননি বলবন্ত পারেখের। মোটা বেতনের আইনজীবীর চাকরি ছেড়ে শুরু করেন পিয়নের কাজ। সেই পিয়ন থেকে আবার হন হাজার কোটি টাকার কোম্পানির মালিক।

ভারতের গুজরাটের ভাবনগর জেলার মাহুবা শহরে ১৯২৫ সাখে এক জৈন পরিবারে জন্ম বলবন্ত পারেখের। তার ঠাকুরদা ছিলেন এলাকার নামকরা আইনজীবী ছিলেন। ছোট থেকেই বলবন্ত চাকরির বাইরে অন্যকিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজি ছিলেন না মা-বাবা। তাদের কথাতেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছিল বলবন্তকে। ভর্তি হন মুম্বইয়ের একটি সরকারি কলেজে। সে সময় ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গর্জে উঠেছিল দেশ। যুবক বলবন্তও সেই আন্দোলনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। বাড়ির অমতে গিয়ে পড়াশোনা মাঝ পথে থামিয়েই আন্দোলনে নামেন তিনি।

পড়া শেষ না করেই ফিরে যান গ্রামে। মা-বাবার জোড়াজুড়িতে ফের মুম্বই এসে আইন পাস করতে হয় বলবন্তকে। মা-বাবা স্বপ্ন দেখতেন, ছেলেও হবে ঠাকুরদার মতো বড় আইনজ্ঞ। কিন্তু আইন পাস করেও আইনের বোঝা বইতে পারেননি বলবন্ত পারেখের। রোজ গায়ে কালো কোট চাপিয়ে জেনে বুঝে মিথ্যা বলতে পারছিলেন না তিনি।

চরম অনীহা থেকে আইনের কালো কোট খুলে ফেলে হয়ে পড়েন বেকার। এ অবস্থাতেই কান্তাবেন নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পরের দিনগুলি কেটেছে চরম আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে। নিজে কী খাবেন, স্ত্রীকে কী খাওয়াবেন জানতেন না। মাথার উপর ছিলো না থাকার ছাদটুকুও। উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন এক বন্ধুর গুদাম ঘরে। শুরু করেন পিয়নের কাজ।

ব্যবসায়ী মন নিয়ে স্থায়ী হতে পারেননি কোনো চাকরিতেই। কিছু দিন যাওয়ার পর পিওনের চাকরিও ছেড়ে দেন। তার পর এক বন্ধুর সাহায্যে বিদেশ থেকে সাইকেল, পেপার ডাই- সমস্ত জিনিস আমদানি করে ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া শুরু করলেন। ব্যবসায় বেশ ভালো লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। কয়েক মাসের মধ্যেই স্ত্রীকে নিয়ে মুম্বইয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনে ফেলেন। বসবাসও শুরু করেন সেখানে।

বলবন্ত যখন একজন কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে পিয়নের কাজ করতেন তখন দেখতেন সেখানকার শ্রমিকদের কাঠ জোড়া লাগানোর পিছনে অনেক পরিশ্রম করতে হতো। আর কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য তারা যেই আঠা ব্যবহার করতেন তা দিয়ে প্রচন্ড মাত্রায় দুর্গন্ধ বেরোতো। তাই মানুষের এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সুগন্ধি আঠা তৈরির কথা ভেবেছিলেন।

১৯৫৪ সালে ভাই সুশীলের সঙ্গে মুম্বইয়ের জেকব সার্কল-এ পারেখ ডাইকেম ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। মূলত কাপড় রঙের জিনিসপত্রই তিনি তৈরি করতেন। এর ৫ বছর পর বলবন্ত পারেখ সিন্থেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করে আঠা তৈরির একটি উপায় আবিষ্কার করেছিলেন। এরপরে বলবন্ত পারেখ তার ভাই সুনীল পারেখের সাথে ১৯৫৯ সালে পিডিলাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর বলবন্ত দেশকে সুগন্ধি আঠা ‘ফেভিকল’ উপহার দেন। তখন ফেভিকলের জনপ্রিয়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।

বাজারে আসার পর ফেভিকল ভারত তথা আশেপাশের দেশ গুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ফেভিকল জনপ্রিয়তা পেলে পিডিলাইট কোম্পানি ফেভি কুইক, এম-সিল ইত্যাদির মতো নতুন পণ্যও তৈরি করা শুরু করে।

এখন বলবন্ত পারেখের বড় ছেলে মধুকর পারেখ কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে ভারতে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে মধুকর পারেখের নাম আসে। একটি রিপোর্ট মতে মধুকর পারেখের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার।

ফেভিকলের জোড় এতটাই মজবুত যে ৬২ বছর ধরে ভারতবাসীর মনে রয়ে গিয়েছে এটি। ফেভিকল দিয়ে যাত্রা শুরু করা বলবন্তের সংস্থা পিডিলাইট এখন ২০০-র বেশি ধরনের জিনিস তৈরি করে। আমেরিকা, থাইল্যান্ড, মিশর, বাংলাদেশেও কারখানা খুলেছে পিডিলাইট। সিঙ্গাপুরে গড়ে উঠেছে গবেষণা কেন্দ্র।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.