এমরান হোসেন তানিম, পাবিপ্রবি: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগে চলছে শিক্ষক সংকট। বিভাগটিতে ৭ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন ৩জন। সাতটি ব্যাচের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ,নেই ল্যাবরুম। এতে করে শিক্ষার্থীরা যেমন সংকটে রয়েছেন তেমনি সৃষ্টি হয়েছে তীব্র সেশন জটের। কিন্তু শিক্ষক সংকট নিরসনে নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা নতুন কোনো শিক্ষকের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে তিনজন শিক্ষক ও ৪০ শিক্ষার্থী নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ২৮০ জন হলেও শিক্ষক বেড়েছেন মাত্র চারজন। এর মধ্যে ৪জন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আছেন। বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থ্যাৎ ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিভাগটিতে ২৮০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার অনুপাত ১:৯৩।
সংকটগুলোর কারণে বিভাগে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী। বিভাগটির একাধিক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, ছয় মাসের সেমিস্টার হলেও তাঁরা কখনো এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেননি। প্রতি সেমিস্টার শেষ করতে সাত থেকে আট মাস সময় লাগে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে ও সময় বেশি লাগছে । ২০১৮-১৯ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দুই থেকে আড়াই বছরের সেশনজটে আছেন। এর আগের ২০১৫-১৬ ,২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের তিন ব্যাচ স্নাতক (সম্মান) শেষ করতে ছয়-সাত বছর সময় লাগে । একই সমস্যার কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নিতে পারেননি বিভাগটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৫ই এপ্রিল বিভাগটির শিক্ষক সংকট কাটানোর জন্য প্রশাসন একজন অধ্যাপক এবং একজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু অধ্যাপক পদে কেউ আবেদন না করায় সে পদটি ফাঁকা থেকে যায়। প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগদান করেন নি। সর্বশেষ ১৯ই ডিসেম্বর ২০২৩ সালে ১জন অধ্যাপক , ১জন সহকারী-অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তি হলে ও নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয় নি এবং কোন শিক্ষক পায় নি বিভাগটি। ফলে নিয়োগের জন্য ৪টি পদ ফাঁকা আছে।
হতাশা প্রকাশ করে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিস আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাড়ে পাঁচ বছর শেষে চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারে আছি। এই সেশনজটের দায়ভার কে নেবে? আমার পড়াশোনা কখন শেষ হবে, সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের বিভাগের শিক্ষক সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলো প্রায় এক বছর আগে শেষ করে বেরিয়ে গেছে। এই বৈষম্যের সমাধান কোথায়? শিক্ষক সংকট, ফলাফল প্রকাশে ৮মাসের দীর্ঘ সময়, পর্যাপ্ত ফ্যাসিলিটি ও ল্যাব রুমের অভাব—এসব সমস্যার সমাধান কি আমাদের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব? ভিসি স্যারের কাছে আবেদন, দ্রুত সেশনজট নিরসন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা ও ফলাফল দ্রুত প্রকাশ নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি শিক্ষক সংকটও সমাধান করা হোক, যাতে আমরা দ্রুত শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারি।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন আহমেদ বলেন, সেশনজট হতাশা থেকে মুক্তি চাই। বন্ধুরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে অথচ আমি এখনো অনার্স শেষ করতে পারিনি। জট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
বিভাগটির চেয়ারম্যান ড. সাব্বা রুহি বলেন, শিক্ষক সংকট কাটানোর জন্য প্রশাসনের কাছে একাধিকবার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক দেওয়া হয় নি। আমার বিভাগে শিক্ষক নেই, নানামুখী সংকট। অনেকগুলো ব্যাচ চলমান। সবগুলো ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা সঠিক সময়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন যেনো গেস্ট টিচারের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা যথাসময়ে শেষ করতে পারবো। শিক্ষারথীদের সেশনজট কমিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে জানান।