ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফাকে ইসলামবিদ্বেষী ট্যাগ দেওয়া ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি থেকে বাতিল করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনকে ইসলামবিদ্বেষী ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। যা বৈষম্যহীন ও সমতার বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায়। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যেসকল শিক্ষক শিক্ষার্থীবান্ধব ছিলেন তাঁদের মব লিঞ্চিংয়ের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক ট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
বিশ্বববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সাবেক ভিপি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, আমাদের দেশে এখনো ফ্যাসিবাদের প্রতিটি উপাদান রয়ে গেছে। এই যে মবের তাণ্ডব ফ্যাসিবাদে রূপ নিয়েছে তার একটি নগ্ন উদাহরণ হচ্ছে, সামিনা লুৎফা ম্যাম ও কামরুল হাসান মামুন স্যারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যে আক্রমণ করা হচ্ছে সেটা।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে ড. ইউনুসও এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে কথা বলেছিলেন কিন্তু তার প্রতি কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণ নেই। তার প্রতি ঠিকই নতি স্বীকার করছে। কিন্তু অন্যদিকে, সামিনা লুৎফা ম্যাম ও কামরুল হাসান স্যারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। একই ধরনের আচরণের শিকার হতে দেখেছি আমরা আনু মোহাম্মদ স্যার ও তানজিম উদ্দিন খান স্যারকে। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন, গত ১৫ বছর ধরে তারা আমাদের পাশে থেকেছেন আর কারা থাকবেন, আমরা সবই জানি। আমাদের এই শিক্ষকরা যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাদেরকে নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। কেন বারবার তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হবে? আমার মতাদর্শের সাথে আরেকজনের মতাদর্শ নাই মিলতে পারে। এখানে বড় জোর আমি তাকে এড়িয়ে চলতে পারি। কিন্তু আমরা তার উপর আক্রমণ করতে পারি না। আমাদের বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে, নয়তো সব সময় আমরা অন্যের ব্যবহৃত বস্তু হিসেবে থেকে যাবো।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী শামিমা আক্তার বলেন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফাকে প্রজ্ঞাপন জারি করে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কমিটিতে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তাঁর অতীতের কোনো এক সময়ের পোস্ট বা কমেন্টকে কেন্দ্র করে ইসলাম বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে তাঁকে বাতিল করা হয়েছে। এই ট্যাগিং কালচার ছিল পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের একটা হাতিয়ার। তারা বিভিন্ন সময় শিবির,বিএনপি, জঙ্গি ট্যাগ দিত। আমরা চাই এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি বন্ধ হোক। সামিনা ম্যামকে তাঁর অর্পিত দায়িত্বে আবার ফিরিয়ে আনা হোক এবং যারা তাঁকে ট্যাগ দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এর আগে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনকে রাখা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। এরপর শনিবার বাতিল করা হয় ওই কমিটি।
You might also like