জাবি প্রতিনিধি : নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান
সোমবার ( ১৮ মার্চ ) বিশ্ববিদ্যালয় নতুন প্রসাশনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পদত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেজিস্ট্রার আবু হাসান।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্বামীকে আটকে রেখে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের ঘটনার পর প্রক্টরের উপস্থিতিতে ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান পালিয়ে গেলে প্রক্টরের বিরুদ্ধে ধর্ষককে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠে। এরপর থেকেই প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ধর্ষণ কান্ডের পর গঠিত হওয়া ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।
সর্বশেষ গত ৯ মার্চ প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে আবেদন করে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। তবে ১০মার্চ (রবিবার) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় প্রক্টরের অব্যাহতির বিষয়ে কোন আলোচনা না হলে ১১ মার্চ থেকে টানা তিন দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা।
এরপর গত ১৩ মার্চ আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম। আলোচনা শেষে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সংগঠক অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন উপাচার্য বলেছেন, প্রক্টরকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ১৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। ১৮ মার্চের আগেই প্রক্টর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে দেন।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান আ স ম ফিরোজ উল হাসন । এরপর ৩ বছর ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে।
পাঁচ বছরের দীর্ঘ সময়ে দায়িত্ব পালনের সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নান বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য
বিভিন্ন সময়ে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
যৌন নিপীড়নের দায়ে বহিষ্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিরকে বাচাতে অভিযোগকারী ছাত্রীকে দিয়ে জোরপূর্বক দায়মুক্তি পত্র লেখানোর অভিযোগ আছে প্রক্টরের বিরুদ্ধে ।জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এর উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী কে দিয়ে জোরপূর্বক দায়মুক্তি পত্র লেখানো হয়। এরপর ১৬ই জানুয়ারি ভুক্তভোগী উপাচার্য বরাবর দায়মুক্তি পত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
এছাড়াও, গত বছরের ৪ আগস্ট নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষিকাকে আটকে টাকা আদায় করেন শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মী। ঐ দিনই এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মৌখিকভাবে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে। কিন্তু প্রক্টর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। ১০ আগস্ট ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সংবাদ মাধ্যমকে জানায় আগামী এক দুই দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তবে ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
ইভটিজিংয়ে অভিযুক্ত রসায়ন বিভাগের ৪৪ ব্যাচের (২০১৪-১৫ সেশন) ছাত্র দেলোয়ার হোসেনকেউ বিচারের মুখোমুখি করেননি প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান।
গত ২০২১ সালের ৮ জুলাই ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযোগের কোন বিচার হয়নি।
ইভটিজিংয়ের ঘটনার মুল অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের অবৈধ আবাসিক ছাত্র। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।
১৮ মার্চ নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবিরকে।