The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

নেকাব না খোলায় ভাইভা দিতে পারল না ইবি ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নেকাব না খোলায় সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভায় অংশ নিতে পারেননি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। গত ১৩ই ডিসেম্বর বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এই ঘটনা ঘটে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ই ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভা বোর্ডে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ভাইভাতে নেকাব পরে অংশ নেয়া এক ছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকরা। এসময় ওই ছাত্রী নেকাব খুলতে অসম্মতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে নেকাব না খোলায় তার ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা। ওই ছাত্রী জানান, নেকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার ভাইভা গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারো তার ভাইভা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে ওই ছাত্রী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখনো পর্যন্ত তার ভাইভা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

এই বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে ভাইভায় নেকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি। তাকে বুজিয়েছি যে, “দেখো আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরী হবে না।’’ যখন সে রাজি হয়নি তখন পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দেয়া হয়। এর পরে আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম সে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু প্রমাণ করতে পারেননি। নারী শিক্ষক দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, “এভাবে করলে আমরা মার্ক দিব না।” ’

বিভাগটির সভাপতি শিমুল রায় বলেন, এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন কিন্তু সবসময় তো থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা কি করবো? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেয়া হয়নি।

বিশ^বিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ইসলামে নেকাব পরা ফরজ নয়। কিন্তু যেহেতু চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে নেকাব করা উত্তম।

বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেয়া উচিত। বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মূখ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিৎ।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, কেউ ধর্মীয় বিশ^াসের জায়গা থেকে নেকাব করলে শিক্ষিকাদের দ্বারা তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেয়া ভালো কিন্তু জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি জানিনা। এ বিষয়ে জেনে তারপর বলতে পারবো।

ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই কাজটি উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এরকম শিক্ষার্থীরা থাকে, তবে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকদের মাধমে তাদের আইডেন্টিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে বলেও জানান ভিসি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.