জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করা বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের সময়সীমা জানতে চাননি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং শফিকুল আলম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শফিকুল আলম বলেন, বিশ্বনেতারা কোনো সময়সীমা জানতে চাননি। তারা জানেন, বাংলাদেশে যে কাজগুলো (সংস্কার) হবে, তার জন্য সময় লাগবে। তারা এগুলো সমর্থন জানিয়েছেন। আর সময়টা নির্ভর করবে সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর। তারপর নির্বাচন কবে হবে সেই বিষয়টি আসবে।
রাষ্ট্র সংস্কার গঠিত ৬ কমিশন ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করার কথা ছিল, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল থেকে ৬ কমিশনের কাজ শুরুর কথা। কিন্তু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো একটা স্টেকহোল্ডার। তাদের সঙ্গে আলাপ হবে। অনেক কিছুতে তাদের মতামত চাওয়া হবে। এ বৈঠক দ্রুতই হবে।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই কমিশনগুলো (চূড়ান্তভাবে) কাজ শুরু করবে।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংস্কার ইস্যুতে আলোচনা করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এটা ঠিক করবে উপদেষ্টা পরিষদ।
ড. ইউনূস আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, সে নির্বাচন করবেন না। রাষ্ট্র মেরামতের কাজটা নিয়ে তিনি ভাবছেন। নতুন বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। এই মহৎ কাজকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে চান তিনি।
আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়ার সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান দেশের পরবর্তী নির্বাচন হতে ১৮ মাসের মতো সময় লাগার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ওই রিপোর্টে ১৮ মাসের কথা কোড-আনকোড করা হয়নি। সেখানে তারা ১৮ মাস সময় লাগার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে এনেছেন।
তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচন হতে ১৬ মাস নাকি ১২ মাস, নাকি ৬ মাস লাগবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। রাষ্ট্র সংস্কারে যে কমিশনগুলো করা হয়েছে তারা রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করবে। তাদের রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক মতামত নেওয়া হবে। এরপর দেশের জনগণ, সুশীল সমাজসহ সব অংশীজনদের ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচনের বিষয়ে।
রাষ্ট্র সংস্কারে বিশ্বনেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সংস্কারের সহায়তার বিষয়ে বিশ্বনেতা পর্যায়ে আলোচনা হয় না। এটা ফরেন সেক্রেটারি পর্যায়ে হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘে খুব ব্যস্ত সময় পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই সময়ে ৫০টির মতো মিটিং করেছেন। এর মধ্যে ১২টি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে। একটি মিটিং শেষ করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক নেতা এসে কুশল বিনিময় করেন। সবাই তার (ড. ইউনূস) সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। তারা বলেছেন, এই সরকারকে সমর্থন করেন এবং সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। এই সফরটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত পজিটিভ ছিল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এ নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একটা সংবাদ সম্মেলন করবেন।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার ব্যাপারে কেমন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, বিশ্বব্যাংক ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা দেওয়ার দেওয়ার কথা বলেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১. ৯৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে।
আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে ড. ইউনূসের কথা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। সফর শেষে তারা পর্যবেক্ষণ জানাবে। তারা গত বছর যে অর্থ সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে, তার অতিরিক্ত আরও সহায়তা দেবে বলে আশা করছি। এটা ৩ বিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।