The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫

নিজের হাত-পা বাঁধা ছবি স্ত্রীকে পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

ডেস্ক রিপোর্ট:  অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন মোহাম্মদ ইদ্রিস নামের মালেশিয়া ফেরত কর্মহীন এক ব্যক্তি। উদ্দেশ্য ভাইদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন এবং মালয়েশিয়া যাবেন। তবে উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার আগেই ধরা পড়েন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে মোহাম্মদ ইদ্রিস নামের ওই ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম নগরের মোহরার বালুর টাল এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌলভীপাড়া এলাকায়। রাতে তাকে পেকুয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে কর্মহীন হয়ে পড়েন ইদ্রিস। এরপর ধারকর্জ করে তার সংসার চলছিল। ঋণ বেড়ে যাওয়ায় পাওনাদারের তাকে চাপ প্রয়োগ করছিলেন। তাই ঋণের টাকা পরিশোধ করে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীকে ইদ্রিস বলেন ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধের জন্য।

জানা গেছে, রশি দিয়ে নিজের হাত-পা বাঁধা ছবি পাঠান স্ত্রীর মুঠোফোনে। স্ত্রীকে বলেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা না দিলে অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করবেন। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে জানতে পারেন, তিনি নিজেই সাজিয়েছিলেন এই অপহরণের নাটক।

পুলিশ জানায়, ২৪ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে পেকুয়ার টৈটং বাজার থেকে আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর তার স্ত্রীকে ফোন করে অপহৃত হওয়ার কথা জানান। স্ত্রীকে বলেন, ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নইলে অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলবে। পরে পরিবারের সদস্যরা দফারফা করে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়।

পুলিশ প্রথমে ইদ্রিসের মুঠোফোনের সর্বশেষ অবস্থান ধরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান। তবে ইদ্রিসের সন্ধান না পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে—এমন একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামী নবী হোছেন। নবী হোছেনকে চট্টগ্রাম নগর থেকে আটকের পরে তার সহায়তায় ইদ্রিসের সন্ধান পায় পুলিশ। অপহরণ নাটকের বিষয়টি নবী হোছেনকে আগেই জানিয়েছিলেন ইদ্রিস।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফার কক্ষে ইদ্রিসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার তিন লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এই টাকা পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল। এছাড়া বেশি টাকা আদায় করতে পারলে তা দিয়ে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। ইদ্রিস বলেন, ‘দোকান থেকে রশি কিনে অন্য একজনের সহায়তায় নিজের হাত-পা বেঁধে ছবিটি স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। ঘটনাটি এত বড় হবে ভাবিনি। এখন আমি অনুতপ্ত।’

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফকে অপহরণ করা হয়। এরপর অপহরণকারীরা হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা ছবি পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৪০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করেন। একপর্যায়ে ১১ অক্টোবর বাড়ির পরিত্যক্ত একটি পুকুর থেকে পায়ে ইট বাঁধা ও বস্তাবন্দী অবস্থায় আরিফের লাশ উদ্ধার হয়। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে লক্ষ্যে দ্রুত ইদ্রিসকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে পুলিশ।

এদিকে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ইদ্রিসকে আজ বুধবার দুপুরে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হবে। তার বিষয়ে আদালত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.