দেশকে ভালোবেসেছেন, সবকিছুর বিনিময়ে দেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন আজীবন। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিজের সকল সামর্থ্যকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আজীবন, মৃত্যুর পরও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সদ্য প্রয়াত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার দেহ দান করে গেছেন। মরণোত্তর দেহদানের মাধ্যমে নিজের শরীরকেও মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্য সামিয়া। ডা. জাফরুল্লাহ পরিবারের সম্মতি নিয়েই রেখেছিলেন। সে অনুযায়ীই সবকিছু হবে। মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। ৮২ বছর বয়সী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বহুবছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। মা–বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।
১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সেই হাসপাতালের নামেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে নাম ঠিক করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত না হলেও আজীবন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। গণমুখী বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সংহতি-সমর্থন দিয়ে গেছেন। জাতীয় জীবনে অবদান রাখার জন্য ১৯৭৭ সালেই স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ঔষধ নীতি প্রণয়নেও তার ভূমিকা ছিল।