সাঈদ মঈন, সরকারি বাঙলা কলেজ: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে নারী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ বিতার্কিক দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইডেন মহিলা কলেজ বির্তাকিক দল। আজ সোমবার রাজধানীর এফডিসিতে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়’ শীর্ষক বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা’র সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘পারিবারিক পরিচয়ে নয়; বরং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নারীকে এগিয়ে যেতে হবে। টিকে থাকতে হলে বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের সঙ্গে নারীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নাই। পুরুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দুর করতে গণতন্ত্রের সঙ্গে সমতন্ত্র কায়েম করতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে নারী-পুরুষ বৈষম্য বিলোপ প্রয়োজন।’
তাসমিমা হোসেন আরও বলেন, ‘আদালতের আদেশে সন্তানের পরিচয়ের জন্য শুধুমাত্র মায়ের নাম লিপিবদ্ধ করা যাচ্ছে। যা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত।’
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘নারী পুরুষের মতো পূর্ণ মানবসন্তান হিসেবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু সমাজের তৈরি প্রথা, নিয়ম-কানুন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আইন একজন নারীকে পূর্ণ মানবের পরিবর্তে অর্ধ মানব বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। সর্বস্তরে নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থনৈতিক বৈষম্য, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ, নারীর ক্ষমতার অপর্যাপ্ততা, মূল্যবোধের অভাব, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা, বিচারের ধীরগতিসহ সমাজের সর্বস্থরে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে নারী নিপীড়ন বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোন ধর্মই নারীকে ছোট করার কথা বলেনি। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে অপমান করা আইন করে বন্ধ করা উচিত। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীকে অবমাননা করার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। নারীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় নির্বচনে এক তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া উচিত। ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছেলে সন্তানের পাশাপাশি মেয়ে সন্তানের সম্পত্তি প্রাপ্তিতে সমতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’
প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক রোকসানা আনজুমান নিকল ও সংবাদ উপস্থাপক সিফাত শারমিন।