আলকামা রমিন,খুবি প্রতিনিধি: তাদের পদচারণায় প্রাণের উচ্ছ্বাস বইছে বাতাসে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনে তাদের চোখে-মুখে ছিল অন্যরকম আবেগ।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনসমূহের করিডোর, গোলপাতার ছাউনিতে তৈরি নতুন ক্যাফেটেরিয়া, শহিদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, অদম্য বাংলার পাদদেশ, তপনের দোকান, সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখে মনে হয় এ যেনো এক মিলনমেলা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি আড্ডাস্থলে পুরাতনদের পাশাপাশি আলো ছড়িয়েছে তাদের মুখগুলো। বলছি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের( খুবি) ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের সকল ডিসিপ্লিনের স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের প্রথম টার্মের ছাত্রছাত্রীদের কথা। আজ ১৬ আগস্ট (বুধবার) থেকে শুরু হয়েছে নবীনদের ক্লাস। সকাল ৮টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ায়, শিক্ষার্থীরা তার আগেই ক্যাম্পাসে হাজির হয়। অনেক নবীনের সঙ্গে আবার তাদের অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা দেখে উৎফুল্লিত হয়। নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বুধবার থেকে সৌন্দর্যের মাত্রাটা আরো বেড়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। নবীন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে প্রাণের আরেক মাত্রা যোগ হয়েছে এ ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের চারদিকে নবীনদের আগমণে আনন্দের ঢেউ যেন দোলা দিচ্ছে ক্যাম্পাসের প্রতিটা চত্বরে চত্বরে। নতুন শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি কথা জানিয়েছেন ‘দৈনিক কালবেলা পত্রিকাকে’।
প্রথম দিন ক্লাস করতে যাবো। কেমন যেন একটা মিশ্র অনুভতি টের পাচ্ছিলাম ভেতরে ভেতরে। প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার সেই অনুভতিটা ফিরে ফিরে আসছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো কখনো ভাবিনি। আজ সেখানে আমি ছাত্র হিসেবে উপস্থিত। ভার্সিটির বিরাট বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাতেই কেমন যেন গর্ব হলো। মনে হলো, আমি বড় হয়েই গেছি। শিক্ষক বন্ধুদের আন্তরিক আচরণ যেন অপরিচিত সবকিছুই চিরচেনা। আমি ভার্সিটির কৃতী শিক্ষার্থীর স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। হতে চাই অনেক বড় কিছু।
এ আশার কথাগুলো জানান, গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের নবীন শিক্ষার্থী মাহমুদ শেখ।
বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনে ভর্তি হওয়া নাহিদ হাসান নামের নবীন এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করবো। কঠোর অধ্যবসায়ের ফলে আমার সেই লালিত স্বপ্নকে আজ পূরণ করতে পেরেছি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হলো। ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও বড় ভাই-আপুদের ভালোবাসায় সিক্ত হলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিনের অনুভূতিটা খুবই ভালো লাগছে।
প্রথম দিনের ক্লাসের অনুভূতি জানতে চাইলে সুমাইয়া খাতুন নামের এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি পরীক্ষার দীর্ঘ যাত্রার পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসের অনুভূতিটাই অন্য রকম। নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাই খুব ভালো লাগছে। সকল বন্ধুরা মিলে স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু করলাম।
সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের রাকিব হাসান বলেন, বছরের প্রথম দিনেই শুরু এ সবুজঘেরা ক্যাম্পাসে আমার স্বপ্নযাত্রা। যদিও প্রথম দিন শিক্ষা জীবনের এ নতুন স্তরে প্রবেশের পূর্বমুহুর্তেও মনে কিছু সংশয় ও ভীতি কাজ করছিল। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাই-আপুদের আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের স্নেহপূর্ণ নির্দেশনায় সে ভীতি-সংশয় নিমিষেই দূরীভূত হয়ে যায়। আশা করি নতুন এক আগামীর প্রত্যয়ে লালিত স্বপ্নগুলোর বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়া দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার দু’দিনের মধ্যে ক্লাস শুরু হয়েছে। এটা এক অন্যরকম অনুভূতি। নবীন শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তারা যেনো কোনও একাডেমিক ক্ষতির মুখে না পড়ে সেজন্য দ্রুত ক্লাস শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো রকম হয়রানিতে না পড়ে সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে র্যাগিংয়ের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরু করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধানসহ সকল শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।