জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ দীর্ঘ প্রায় ১ মাস অভিভাবকহীন থাকার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে উপাচার্য পেয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতদিন নিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে উপাচার্য নিয়োগের দাবী জানিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে এই প্রথম নিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে উপাচার্য পেয়েছে তারা।
তাই স্বাভাবিকভাবেই এ উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে। তারই ধারাবাহিকতায় উপাচার্যের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবী, তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে দেখতে চান। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়া তারা উপাচার্য পাননি, তাই চাহিদামাফিক উন্নতিও করা সম্ভব হয়নি। বিগত উপাচার্যগণ সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেননি। এবার যেহেতু তারা তাদের দাবি অনুযায়ী উপাচার্য পেয়েছেন, তাই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়ন চান এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাজ করবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম নাঈম বলেন, শিক্ষার্থীদের অবাধ জ্ঞান চর্চা, গবেষণা এবং মানসিক বিকাশের মধ্য দিয়েই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠে। আমি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে থাকবে বিশ্বমানের শিক্ষার পরিবেশ এবং সৃজনশীল কর্ম ও চিন্তার প্রসারতা। বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ও তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত বিষয়গুলো নজর দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত কিংবা দাবিসমূহ স্বাধীন ও নিঃসংকোচে প্রকার করতে পারবে। বিদ্বেষমূলক অপরাজনীতি বন্ধ এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের অন্যতম দায়িত্ব। তাছাড়া আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষনা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা তুল কুবরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে আমার প্রত্যাশা থাকবে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বন্ধু হয়ে উঠুক, অভিভাবক নয়। তিনি আবাসন সংকট, খাদ্য সংকট সহ যত সমস্যা আছে সবগুলো নিজে অনুভব করে সেগুলো নিরসনে কাজ করুন। এজন্য ২য় ক্যাম্পাসের হলগুলো আগে তৈরি করা ও ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার প্রত্যাশা থাকবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুততম সময়ে সম্পন্নের প্রত্যাশা থাকবে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মানসুরিন আক্তার রিমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা মাননীয় ভিসি মহোদয় আগামী দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন হিসেবে গড়ে তুলবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাস নির্মান কাজ সম্পন্ন করবেন ও ছেলেদের জন্য বরাদ্দ থাকা হলগুলো উদ্ধার করে তাতে ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ভবিষ্যতের জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে তৈরি করার জন্য প্রতিটি বিভাগে ঐ বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, স্বপ্ন পুরণের প্রত্যাশা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। কিন্তু আবাসন সমস্যা, অবকাঠামো সমস্যা, ক্যান্টিন সমস্যা নানাবিধ এসব আমাদের শিক্ষার গুণগত পরিবেশের অন্তরায়। একজন শিক্ষার্থী হিসাবে আমার চাওয়া ক্লাস, পরীক্ষা, সেমিনার, গ্রন্থাগারের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য চাহিদা মাফিক ক্যান্টিন অথবা ক্যাফে বাস্তবায়ন। এছাড়াও শতভাগ আবাসন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি। এছাড়াও দ্রুত ছাত্র সংসদ কার্যকর করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রোকসানা মিতু বলেন, বিপ্লব পরবর্তী এবং জবির শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হিসেবে স্যারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং শিক্ষার পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। হলগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। গবেষণামূলক পড়াশোনা যেন শিক্ষার্থীরা করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এজন্য ল্যাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে৷ ক্যান্টিনের খাবারের গুণগত মান আরো উন্নত করতে হবে এবং সেটার মূল্য যেন সহনীয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আশা করি স্যার দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা জাহান বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ড.মোঃ রেজাউল করীম স্যারের কাছে থেকে আমি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, দূর্নীতি, যেখানে থাকবে শিক্ষার্থী বান্ধব প্রশাসন ব্যবস্থা। যত দ্রুত সম্ভব নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করতে হবে। আবাসন, ক্যান্টিন, বাস অর্থাৎ
শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থা সহ সকল প্রকারের সুবিধা প্রদান করতে হবে। শিক্ষকরা ঠিক সময়মতো ক্লাস না আসলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করার সূযোগ থাকবে।শিক্ষার্থীরা যাতে সেশন জটে না পড়ে তার যথা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসলে তারা যেন র্যাগিংয়ের স্বীকার না হয় সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।