হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ, কুবি প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম হামলা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি)। এরপর একে একে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু হলে পাল্টে যায় আন্দোলনের গতিপথ। একদফা দাবিতে কোটা আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। জন্ম হয় নতুন এক বাংলাদেশের। এদিকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ১৯ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম উপাচার্য। নতুন উপাচার্যের কাছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন দ্যা রাইজিং ক্যাম্পাসের কুবি প্রতিনিধি হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসির কাছে আমার প্রত্যাশা হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ ও স্বচ্ছ করে ছাত্রদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা। ক্যাম্পাসে একটি নিরাপদ, উদার এবং সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা ও স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাবে। আশাকরি তিনি আমাদের সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত একটি ক্যাম্পাস উপহার দিবেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী একা তালুকদার বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর আমাদের ক্যাম্পাস আবার নতুন অভিভাবক পেয়েছি। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে উনার কাছে আমার প্রথম চাওয়া থাকবে আমাদের এই ক্যাম্পাসকে সচল ও কর্মক্ষম করে তোলা। বিভিন্ন ইন্টার্নাল ইস্যুর কারণে বিগত ৫ মাস ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে করে প্রায় সব বিভাগের ব্যাচগুলোতে সেশনজট দেখা দিয়েছে। এই সেশনজট নিরসনের জন্য ভিসি স্যার যাতে কার্যকর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটসহ অন্যান্য চাহিদাগুলো যাতে উনি পূরণ করেন এই দাবি থাকবে। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতার সর্বোচ্চ ব্যবহার স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম, দাবি, অবস্থান কর্মসূচি, আন্দোলন যেন সবিশেষ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্যই হয় এই কামনা থাকবে।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শামসের তাবরিজ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বলতে অনেক কিছুই থাকে, সব তো আর রাতারাতি হয় না। আমার প্রথম চাওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিনের অচল অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য তিনি কাজ করবেন বলে আশা করি। বিশেষ করে আমাদের সেশনজট নিরসনের ব্যাপারে। সেই সাথে ভবিষ্যতে ছাত্রশিক্ষক ও কর্মচারী কোনো পক্ষ যাতে বিবাদে জড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে না পারে এ বিষয়ে নতুন উপাচার্য উদ্যোগী হবেন বলে আশা করি। আর কুবি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটা যুগোপযোগী ওয়েবসাইট যেটাতে সেমিস্টার পরীক্ষার আবেদন, ফি প্রদান, সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ বিশেষ সুবিধা সংবলিত থাকবে। এ দাবি পূরণে নতুন উপাচার্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলেও আমি আশা করি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ শেখ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আসলে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে সীমাহীন জ্ঞানের ভাণ্ডার ভাবি আর তার জন্য অ্যাডমিশন টেস্ট নামে এক ভয়ানক যুদ্ধ পার করে আসি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে আমাদের সেই জ্ঞানকে দিনকে দিন সংকুচিত করে ফেলছে। তার জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ঠিক করার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনও তৈরি করার। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। সর্বপ্রথম প্রতিটি বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। ক্যাফেটেরিয়া ও হল-ডাইনিং এর খাবারের মান উন্নত ও দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ল্যাব, গবেষণাগার, সেমিনার কক্ষ চালু করতে হবে। মেডিকেল সেন্টারে যথেষ্ট ওষুধ ও চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া সুষ্ঠু পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তুলতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক আয়োজনে আরও উৎসাহ দেওয়ার মতো ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আয়োজন থাকতে হবে। হলে গণরুম-গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি যেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার যে গণতান্ত্রিক দাবি দাওয়া সেটুকু পুরোপুরি পেতে পারি সেই ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করতে হবে। সর্বশেষ, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত করতে পারি সেটুকু নিশ্চিত করবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।