বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এম.পি. ও উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রারসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের সভাপতিতে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এম.পি.।
তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাঁকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম যা চেয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-সাত কোটি বাঙ্গালিরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। একই কথা কিন্তু শোনা গেছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি নজরুলের মনের যে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা, সেটিকে অনুভব করে সেই বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।”
নজরুল চর্চায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আরও বেশি এগিয়ে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনেছিলেন। এরপর নজরুল আর ভারতে ফেরত যাননি। ১৯৭৬ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের মাটিতে কবির সমাধি সৌধ নির্মিত হয়। সমাধিসৌধ বাঙালির পবিত্র অঙ্গন। বঙ্গবন্ধু সেদিন নজরুলকে বাংলাদেশে না নিয়ে এলে এদেশে নজরুলের আগমন সত্যিই হতো কী না সে প্রশ্ন থেকে যায়। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগের কারণে সেদিন কোন পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন ছাড়াই নজরুলকে বাংলাদেশে আনা সম্ভব হয়েছিল।”
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নন্দনকানন হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিকে পুর্নব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, “শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন-এই তিন মটো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ণ করেছি, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স করেছি, গবেষণা মেলা করেছি। একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রায় যাত্রী হতে চাই। সে অভিযাত্রার দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে চাই।”
সভায় ‘নজরুলের কাব্য প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম। আলোচনা করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. আহমেদুল বারী।
সভাটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। আরও বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিম, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানসহ অন্যরা।
বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক সেমিনার। কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সুমিতা চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তৃপ্তি সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মনিরা পারভীন ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আসিফ ইকবাল আরিফ। আলোচনা করেন সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ। একই অনুষ্ঠানে ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ কর্তৃক নজরুল জীবন ও কর্মবিষয়ক গবেষণা প্রকল্পের বৃত্তি প্রদান করা হয়।